Image description
 

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ পৌরসভার মধ্যবর্তী বরুমতি খালটি ১৯৮০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় তিনি খাল খননের উদ্বোধনের পর বসার জন্য বরুমতি খালের পাড়ে একটি বৈঠকখানা স্থাপন করা হয়, যা এখন আর নেই।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ১৯৮০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তৎকালীন বিএনপি নেতা ও প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমের আহ্বানে বরুমতি খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টারযোগে আড়ালিয়া বিলে অবতরণ করেন। তার আগমনের খবরে চন্দনাইশের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে। ১৯৭৮ সালে পটিয়া থেকে চন্দনাইশ আলাদা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো একজন প্রেসিডেন্টের আগমন চন্দনাইশবাসীর মাঝে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়।

তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে বরুমতি খালের পূর্ব পাড়ে একটি সড়কের নামকরণ করা হয় 'জিয়া সড়ক'। স্বেচ্ছাশ্রমে ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে বরুমতি খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধনের সময় খালের পাড়ে প্রেসিডেন্ট জিয়ার বসার জন্য একটি বৈঠকখানা তৈরি করা হয়। কালো চশমা পরা, সাদা গেঞ্জি গায়ে, মাথায় সাদা ক্যাপ, পায়ের উপর পা তুলে এক দৃষ্টিনন্দন ভঙ্গিতে বসেছিলেন তিনি। সেই ছবিটি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তৎকালীন সময়ে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। কোন চিত্রসাংবাদিক ছবিটি তুলেছিলেন তা কেউ বলতে না পারলেও, ছবিটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে শোভা পেয়েছিল।

 

প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বরুমতি খালের বৈঠকখানাটি ৪৪ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এলেও বৈঠকখানা এবং তার নামাঙ্কিত জিয়া সড়ক সংস্কার করা হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্টের কয়েক মাস আগে কে বা কারা বৈঠকখানাটি ভেঙে ইটগুলো নিয়ে যায়।

 

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান চন্দনাইশে এলে বরুমতি খাল পুনঃখনন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আড়ালিয়া বিলে। বিশাল জনসমাবেশের সঞ্চালনা করেন তৎকালীন ছাত্রদল নেতা হারলার কৃতি সন্তান শাহাব উল্লাহ বাহার। সুরাইয়া নামের ফুটফুটে একটি মেয়েশিশু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ফুলের তোড়া দিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বরণ করেন।

বরুমতি খালের পূর্ব পাড় দিয়ে যে সড়কটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত, স্থানীয়রা সেখানে বৈঠকখানাটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সড়কটির কোনো সংস্কার হয়নি। একাধিকবার খাল পুনঃখনন করা হলেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি।

এ সড়কটি দিয়ে মগবিল, ছাম্বারবিল, উত্তর আড়ালিয়া, সুচিয়া বিল, হারলা বিল, পশ্চিম বিলের কৃষকেরা চলাচল করতেন। এছাড়াও হারলা, পশ্চিম হারলা, দক্ষিণ হারলা, বরমার পূর্বাংশ ও সুচিয়ার একাংশের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীরাও এ সড়কটি ব্যবহার করতেন। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় সড়কটি এখন আগাছায় ঢেকে গেছে ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি চন্দনাইশবাসীর ভালোবাসার ইতিহাস এখনকার প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। বরুমতি খালের উপর বরুমতি ব্রিজ তথা শহীদ মুরিদুল আলম সড়ক থেকে শুরু হয়ে উত্তরে চুড়ামনি সড়কে সংযুক্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জিয়া সড়ক এবং দক্ষিণে দক্ষিণ হারলা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সড়কে সংযুক্ত ৩ কিলোমিটার কর্নেল অলি সড়কটির দুই পাশে এখনো বহু বনজ বৃক্ষ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ সময় ২০ ফুট প্রস্থ ও ৮ ফুট উচ্চতায় নির্মিত সড়ক দুটি বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

পরবর্তীতে স্বেচ্ছাশ্রমে বরুমতি খাল পুনঃখননের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন পটিয়া মহকুমা প্রশাসক নাজমুল আলম ছিদ্দিকী। ১৯৮২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চন্দনাইশ থানা পরিষদের উদ্যোগে ‘থানা স্বনির্ভর গ্রাম সরকার কমিটি’ এ প্রকল্পে প্রস্তাব সংযোজন করে। পরবর্তীতে খালটি দুই দফা পুনঃখনন করা হলেও জিয়া সড়কের উন্নয়নে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, ফলে সড়কটি ধীরে ধীরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বরুমতি খালের পুনঃখননের পাশাপাশি জিয়া ও কর্নেল অলি সড়ক দুটি সংস্কার এবং বৈঠকখানাটি পুনঃস্থাপন করে একটি হেরিটেজ স্থাপন করা হোক। এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতারা দলীয় হাই কমান্ডের সঙ্গে কথা বলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।