
ঢাকার কেরানীগঞ্জে দখল হয়ে গেছে স্বাধীনতার ঘোষক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ জিয়া অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার’। দখলের পর ভবনের বাইরে ও ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে মাছ ও কাঁচাবাজার । প্রতিদিন আদায় হচ্ছে লাখ টাকা চাঁদা । দুই দফা নামও পরিবর্তন হয়েছে ভবনের। বর্তমানে নাম দেওয়া হয়েছে ‘কেরানীগঞ্জ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম’। তবে উদ্ধার হয়নি দখলদারের হাত থেকে। নিয়মিত চলছে অবৈধ মাছবাজার ও কাঁচাবাজার।
বিগত বিএনপির শাসনামলে কেরানীগঞ্জের ১০ লাখ মানুষকে সুবিধা দিতে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নে নির্মিত হয়েছিল শহীদ জিয়া অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার। ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জের মানুষের আচার-অনুষ্ঠানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানের প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়েছিল। ঢাকা জেলা পরিষদের অর্থায়নে ২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জিয়া অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের ভেতরে ২১০টি মাছের দোকান এবং ভবনের সামনের জমিতে ৫০ থেকে ৬০টি সবজি দোকান রয়েছে। বাজারের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘এই জমি ও অবকাঠামোর মালিক জেলা পরিষদ, ঢাকা’। ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ সতর্কসংকেত সাইনবোর্ড থাকার পরও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া হিজলতলা জেলা পরিষদের ভবনের ভেতরে ও বাইরে বাজার দখল এবং চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, আগে চাঁদা নিত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা আর ৫ আগস্ট-পরবর্তী হাতবদল হয়ে এখন নেয় বিএনপি।
ঢাকা জেলা পরিষদের ভূমি সার্ভেয়ার লোকমান হোসেন জানান, ‘২০০৬ সালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া মৌজায় সিএস ৫২৫ খতিয়ানভুক্ত ৫০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত শহীদ জিয়া অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া । বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে এটির নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার কমিউনিটি সেন্টার’।
তিনি আরো জানান, ‘পরবর্তীতে সেনাবাহিনী রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে কমিউনিটি সেন্টারের কিছু জমি অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ শাসনামলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন এটি দখল করে বাজার বসানোর কারণে হাতছাড়া হয়ে যায় জেলা পরিষদের উক্ত ভবনটি।’
লোকমান হোসেন জানান, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আমরা ভবন ও ভবনের জমি উদ্ধারের জন্য সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানোর মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও এটা যারা দখলে নিয়ে বাণিজ্য করছে, তারা অপরাধ করছে।’
নাম না বলার শর্তে বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেট দোকানপ্রতি প্রতিদিন ২০০-২৫০ টাকা চাঁদা আদায় করে। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরীর মুঠোফোনে ফোন করে পাওয়া যায়নি। সাবেক শুভাঢ্যা ওয়ার্ড সভাপতি লিয়াকত আলী জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাজার পরিচালনা করছি।’
অবকাঠামোতে প্রবেশ নিষেধ বিষয়ে জেলা পরিষদের সদস্য ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিনাত ফৌজিয়ার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। প্রায় বাজার নিয়েই অভিযোগ রয়েছে। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত বা জেলা পরিষদের জমিতে কোনো স্থাপনা-জমায়েত নিষিদ্ধ। যেখানে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে, তারপরও যদি কেউ প্রবেশ করে থাকে, তাহলে বেআইনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ঢাকা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন খন্দকার বলেন, কেরানীগঞ্জে জেলা পরিষদের জমির ওপর নির্মিত জিয়া অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারের নাম পরিবর্তন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার কমিউনিটি সেন্টার রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার উচ্ছেদের পর নতুন করে ‘কেরানীগঞ্জ জেলা পরিষদ কমিউটি সেন্টার নামে ভবন নির্মাণ করা হবে।’