Image description
মরুজাহাজ নামে পরিচিত উট আমাদের অপরিচিত প্রাণী নয়। তবে এ দেশীয় প্রাণী না হওয়ার কারণে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে উটের মেলবন্ধন তেমন গড়ে ওঠেনি। বেদ ও জাতকে উটের কথা পাওয়া যায় না। কিন্তু কোরআন-হাদিস, বাইবেল, লেবীয় পুস্তক, ঋগ্বেদ, মনুসংহিতা, বুক অব জাজেসে উটের কথা ঠিকই রয়েছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও উট প্রসঙ্গ এসেছে।

ভারতীয় এক দোঁহাতে রয়েছে, ‘মারওয়ানের পুরুষ, জয়শলমীরের নারী, সিন্ধু দেশের ঘোড়া আর বিকানীয়ের উট; এদের জুড়ি নেই।’ এই দোঁহাতেই পরিষ্কার, উট বাংলাদেশের প্রাণী নয়। মজার ব্যাপার হলো, বেদ ও জাতকে উটের কথা পাওয়া যায় না। কিন্তু কোরআন-হাদিস, বাইবেল, লেবীয় পুস্তক, ঋগ্বেদ, মনুসংহিতা, বুক অব জাজেসে উটের কথা ঠিকই রয়েছে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও উট প্রসঙ্গ এসেছে। উট নিয়ে যিশুর বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, ‘ঈশ্বরের রাজ্যে ধনীর প্রবেশের চেয়ে সুচের গর্ত দিয়ে উটের যাতায়াত সহজ।’ বাংলা সাহিত্যেও উট নিয়ে খুব একটা মাতামাতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেদুইন হয়ে উটের দুধ খেতে চাইলেও জীবনানন্দ দাশ উটকে অশুভ প্রতীক হিসেবে এঁকেছেন, ‘এই কথা বলেছি তারে চাঁদ ডুবে চলে গেলে অদ্ভুত আঁধারে যেন তার জানালার ধারে উটের গ্রীবার মতো কোন এক নিস্তব্ধতা এসে।

সংস্কৃত ‘উষ্ট্র’ থেকে বাংলায় ‘উট’ শব্দটি এসেছে। ‘উষ্ট্র’ শব্দের মূল ‘উষ্’ ধাতু। এর অর্থ ‘যে মরুতাপে দগ্ধ হলেও সূর্যতাপে পীড়িত হয় না’। আর্য ও সেমিটিক জগতে ‘উট’ শব্দটি অভিন্ন উৎস থেকে উদ্ভূত হতে পারে।
 
কারণ সেমিটিক ভাষায় এটি ‘গামাল’, ফিনিসীয় ও হিব্রু ভাষায় এটি ‘গিমেল’, আরবিতে ‘জমল’। এটি লাতিনে ‘কামেলুস (camelus), গ্রিকে ‘খামোলাস’ (chamelos), ইংরেজিতে ‘ক্যামেল’ (camel)। আবার সংস্কৃত ‘উষ্ট্র’ শব্দের সঙ্গে ফারসি ‘উশতর’ ও প্রাচীন আবেস্তার ‘উসতর’ শব্দের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ‘উশতর’ ও ‘উসতর’ মানে উট।
যা হোক, বাংলাদেশে আরামবাগে উটের খামার থাকলেও যশোরের বেনাপোলে উটের খামার অনেকে প্রত্যাশা না-ও করতে পারেন। তার পরও বেনাপোলে গড়ে উঠেছে উটের খামার। খামারটি নিজের চোখে দেখতে নিয়মিত ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ উট সামনে রেখে তুলছেন সেলফি, করছেন ভিডিও! যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামের নাসির উদ্দিনের খামারে রয়েছে অর্ধডজন তরতাজা উট। এর আগে বাংলাদেশে কোরবানির সময় বিচ্ছিন্নভাবে উটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। যশোর শহরে বছর পাঁচেক আগেও একবার কোরবানি দেওয়া হয়েছিল উট।

জানা গেছে, নাসিরের খামারে রাখা উটগুলো এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা হয়। প্রতিটি উটের উচ্চতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে একেকটি উট বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার মধ্যে। এই খামারে সাতটি উট আছে, এর মধ্যে একটি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
খামারি জানান, এই উটগুলো তাঁরা বিশেষ যত্নে রেখেছেন কোরবানির জন্য। প্রতিদিন সকালে তাদের গোসল করানো হয়। এরপর খাওয়ানো হয় ছোলা, ভুট্টা আর ঘাস। প্রতিদিন ভোরে শুরু হয় উটের পরিচর্যার কাজ। পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল, তারপর খাওয়ানো হয় উন্নতমানের খাবার। কেননা সৌদি আরবের রাজকীয় সেবায় অভ্যস্ত এরা। উটের পরিচর্যায় রয়েছে আলাদা যত্ন। বিশাল এই প্রাণীগুলোকে প্রতিদিন নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে খাওয়ানো হয়।

এদিকে বেশ কয়েকটি উটের উপস্থিতির খবর পেয়ে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে এই গ্রাম। অনেকে শুধু চোখের দেখা দেখতে আসছেন। অনেকে আসছেন পরিবারসহ। ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে জেনে নিচ্ছেন উটের আদ্যোপান্ত। কেউ কেউ আসছেন কোরবানির জন্য দরদাম করতে।
যেখানে কোরবানির হাট মানেই গরু ও ছাগলের আধিপত্য, সেখানে মরুভূমির জাহাজ হয়ে উঠেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। পুটখালী গ্রামের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন ঈদের আনন্দকে দিয়েছে এক নতুন মাত্রা।

যশোরের শার্শা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তপু কুমার সাহা বলেছেন, ‘আমাদের সীমান্ত এলাকায় সাধারণত উট দেখা যায় না। এসব প্রতিপালন বা পোষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই প্রথম পুটখালী গ্রামের নাসির শখের বশে সৌদি আরব থেকে উট আমদানি করেছেন, যা কোরবানির জন্য বিক্রি করবেন। এদের প্রতিপালন, খাদ্যতালিকা ও পরিচর্যার নিয়ম সম্পর্কে খামারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’