Image description

অবশেষে মুখ খুললেন আলোচিত আত্মহত্যা করা এএসপি পলাশ সাহার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এএসপি পলাশ আত্মহত্যা করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুস্মিতাকে নিয়ে চলছিলো আলোচনা আর সমালোচনা।

শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরী পাড়ায় বাবার বাড়িতে বসে কথা বলেন সুস্মিতা সাহা।

সুস্মিতা বলেন, ওর (পলাশ সাহা) মা আমাকে সংসার করতে দেয়নি। আমার স্বামী আমার হাতের রান্না ভালো খেতো বলে আমার শাশুড়ি আমার রান্নাবান্না করা বন্ধ করে দিলো। আমার শাশুড়ির পরিকল্পনা ছিলো ছেলে বিয়ে করবে বউকে, তাড়াতাড়ি বাচ্চা হয়ে যাবে, বউ সংসার আর বাচ্চা নিয়ে থাকেব, আর তিনি তার ছেলেকে নিয়ে থাকবেন।

তিনি আমাদের স্বামী-স্ত্রীকে এক সঙ্গে কথা বলতে দিতেন না। পলাশ দিনের যতটুকু সময় বাসায় থাকার সুযোগ পেতো ততটা সময় আমার শাশুড়ির সঙ্গে থাকত। কিন্তু আমি কিছু মনে করতাম না। সংসার কেবল মাত্র শুরু করেছি হয়তো একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই একদিন দিনের পর দিন হতেই থাকলো, আমার স্বামীর মধ্যে কোন পরিবর্তন হলো না। ও ওর মাকে সময় দিতো, আমাকে আর সময় দিতো না।

আমার স্বামীর বয়স ৩৫ বছর, যেদিন মারা গেলো সেদিন সকালেও আমার শাশুড়ি তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আড়াই বছর ধরে দেখছি একটা বাচ্চা ছেলের মত ওর মা দেখাশোনা করছে। প্রতিটা ক্ষেত্রে ও কি পোশাক পরবে, কী পোশাক কিনবে, ও কোনটা পরে অফিসে যাবে কি যাবে না, ও কখন কি খাবে, কখন ঘুমাবে, কখন ঘুম থেকে উঠবে সবটা ওর মা করে ও বলে দিত। আমার স্বামীও সেটাই মেনে নিত।

এই আড়াই বছরে পলাশের মা সকালের নাস্তা তৈরি করতো, আমাকে করতে দিতো না। আমার শাশুড়ি প্রথম ৬/৭ মাস আমাকে অনেক যত্ন করেছে। আমি ভাবতাম আমি যদি ওর মাকে ভালোবাসি তাহলে ও ভালো থাকবে সেজন্য আমি প্রথম ৬/৭ মাস অনেক করেছি।

আমার শাশুড়ির পছন্দ ছিলো যারা সোনা, গহনা, অনেক যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে সে রকম মেয়ে। কিন্তু আমার স্বামী নির্লোভী ছিলো, ও সৎ ছিলো, ও আমাকে প্রচণ্ড পছন্দ করত। ও আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। ওর মাতৃভক্তি প্রচুর ছিল। আমিও সেটি মেনে নিয়েছিলাম, কারণ আমিও একদিন মা হবো। তাহলে আমার সন্তানটাও ওর মতো হবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখলাম দেয়ালে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। আমি ওদের খুব যত্ন করতাম, ওকে, ওর মাকে, কিন্তু ওরা আমাকে বুঝতো না। আমার স্বামী আমাকে প্রচুর ভালোবাসতো কিন্তু আমাকে বুঝতো না। হয়তো বয়সের পার্থক্যের কারণে।

বিযের ৬-৭ মাস পর থেকে বলা শুরু করি, কোন সমস্যা বা তোমার মানসিকতা এমন কেন, তুমি পছন্দ করে এনেছো, আমি তো হেঁটে আসিনি। তোমার কি ইচ্ছা করে না, বউকে নিয়ে একটু থাকি বা বউকে আলাদা করে একটু সময় দেই। কিন্তু ও বলতো বউকে আলাদা করে সময় দেওয়ার কি আছে, মা আছে, আমি আছি, তুমি আছো যা করব একসাথে করব। বউকে তো রাতে ভালোবাসা যাবে, রাতে তো বউ-এর সাথে ঘুমাই, তখনই ভালোবাসবো। কিন্তু আমি বলতাম বউকে কি শুধু রাতে ভালোবাসার জন্য, ঘুমানোর জন্য বিয়ে করে, বউয়ের কোন শখ আল্লাদ থাকে না।

আমার একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে হলো বিষয়টা টকসিক, আমি তো ওর স্ত্রী, আমার নিজস্ব একটা সত্ত্বা আছে, আমি নিজের পরিচয় নিয়ে ভূগতে ছিলাম। আমি আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছিলাম না ওদের মাঝে। ওরা দুজনে কথা বলতো মা ছেলে। আমি যখন ওদের মাঝে যেতাম ওরা চুপ হয়ে যেতো, এটা কেমন ব্যবহার। আমি তো ওর স্ত্রী, ঘরের ভিতর আমরা মাত্র তিনটা মানুষ ছিলাম।

আমার স্বামীকে আমিই প্রথম বলেছি মা যেহেতু গ্রাম থেকে এসেছে তাই মাকেই অ্যাটাস্ট বাথরুমসহ মাস্টার রুমটা মাকে দিতে, পরিবেশটা মানাতে সহজ হবে। ওর মা ওর জন্য রান্না করত, ও যতটুক খেতে পারবে ততটুকু। এরপর থেকে আস্তে আস্তে আমার মনে মধ্যে পেইন হতে শুরু করলো এটা কেমন ব্যবহার। ও অফিস চলে যাবার পর আমি আমার ও শাশুড়ি মার জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করতাম আলাদাভাবে। ওর মা যদি তরকারি রান্না করত, সেটা শুধু পলাশের জন্য রান্না করত।

গত বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২ টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়।

ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’

পরে গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে র‌্যাবের পাহারায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মাশানে তার মরদেহের শেষকৃত্য করা হয়। এর আগে র‌্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে পলাশের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।