Image description

মুহাম্মদ সজলের স্ট্যাটস 

দেশের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লেখক ও জনপ্রিয় পুষ্টিবিদ মুহাম্মদ সজল। আজ (২১ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, গত দুই দিনে তিনটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, কুয়েটের ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল-যুবদলের হামলা, শিবিরের সদস্যদের দ্বারা এমসি কলেজের এক ছাত্রের নির্যাতন এবং ছাত্রদলের হাতে তামিরুল মিল্লাতের শিবির নেতা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়েও তিনি কথা বলেন।

তিনি দাবি করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটছে এবং এর সঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে। তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসের আয়নাঘরে যাওয়া, এস আলমসহ অর্থনৈতিক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি এবং র‍্যাব কর্মকর্তা আলেপউদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রমাণ মেলার মতো ঘটনাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করছে।

সজল আরও বলেন, গত দুই দিনে ৫৫ জন ডিসি ও সচিবকে ওএসডি বা ফোর্সড রিটায়ারমেন্টে পাঠানো হয়েছে, যা প্রশাসনিক কাঠামোয় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। তিনি দাবি করেন, এসব ঘটনার পেছনে বাংলাদেশের "প্রো-ইন্ডিয়ান" শক্তিগুলোর ভূমিকা রয়েছে, যারা সরকারকে সীমিতভাবে ব্যর্থ করে ডিসেম্বরে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, প্রশাসন ও বাহিনীর ভেতরে থাকা কিছু শক্তিশালী গোষ্ঠী সরকারকে আরও বড় ধরনের ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিতে চায়।

 

তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশে যারাই অস্ত্রের রাজনীতি করছেন, তারা একটা ব্যাপার জেনে রাখেন, এপ্রিলে সবাইকে একসাথে খেয়ে দেয়ার একটা পরিকল্পনা চলছে।

তার মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোই প্রথম ধ্বংস হবে, এরপর সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সবশেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর সামরিক বাহিনীর পরিণতি কী হয়েছে, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।

তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক কৌশলগত দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে, যেখানে বিএনপি চাইছে জামায়াত-শিবির তাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করুক, যাতে তাদের বাড়তে থাকা "সফট পাওয়ার" দমিয়ে রাখা যায়। অন্যদিকে, বিএনপিকে ব্যবহার করে গভীর রাষ্ট্রের (ডিপস্টেট) পরিকল্পনা হলো তাদের জনপ্রিয়তা কমিয়ে ভারতীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অধীনে রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।

সজল তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ভারতের সম্ভাব্য চারটি পরিকল্পনা রয়েছে—

১. প্ল্যান এ: শেখ হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগকে প্রথমে বিরোধী দলে পাঠিয়ে পরে পুনরায় ক্ষমতায় আনা।
২. প্ল্যান বি: প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে একটি ভারতপন্থী সামরিক-সিভিল ব্যুরোক্র্যাট সরকার প্রতিষ্ঠা।
৩. প্ল্যান সি: দেশে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিস্থিতি তৈরি করা।
৪. প্ল্যান ডি: বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে জামায়াতকে ভারতপন্থী গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, যাতে তারা নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দল হিসেবে টিকে থাকে।

তার মতে, এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের জনগণ যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিল, তা ভেঙে যাবে এবং তারা রাষ্ট্রহীন শরণার্থীতে পরিণত হবে।

এছাড়া, তিনি কুয়েটের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্য করেন, "এখন কোনো প্রিভিলেজড বাবা-মা তাদের সন্তানকে কুয়েটে ভর্তি করানোর ঝুঁকি নেবেন না।" তিনি সতর্ক করেন যে, সহিংসতা কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ধীরে ধীরে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও প্রভাবিত করবে।

তিনি আরও বলেন, ভারত বুঝতে পেরেছে যে বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই দিল্লির পরিকল্পনার প্রধান বাধা, তাই তাদের বিদেশে চলে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করেন, ভবিষ্যতে ইউরোপ ও আমেরিকায় অভিবাসন কঠিন হয়ে উঠবে এবং এসব দেশে জীবনযাত্রার মানও কমতে থাকবে, ফলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে আসবে।

তার মতে, বাংলাদেশের জনগণের এখনকার সংগ্রাম হলো ভারতপন্থী সমস্ত শক্তিকে ন্যায্য প্রতিযোগিতায় আসতে বাধ্য করা। তিনি বলেন, "ক্ষমতা আমরা দেবো, মোদীর হাতে ঢাকার মসনদ নেই।"

তার মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে না পারা বৈষম্যবিরোধী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। তিনি বলেন, যারা সফলভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সংজ্ঞায়ন করতে পারে, তারাই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে।