
বিস্তীর্ণ প্রান্তর। সারি সারি সাজানো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। থোকায় থোকায় ঝুলছে সুমিষ্ট আর রসালো আম, কাঁঠাল, সফেদা। রয়েছে জাম্বুরা, পেয়ারা, লেবু, আমলকী, করমচাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন গাছের চারা। এমন সব ফুল, ফল, লতাগুল্ম, ফলদ গাছের পাশাপাশি বনজ, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক হাজারো প্রজাতির গাছে ভরে উঠেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় বৃক্ষমেলা। ইট-পাথরের নগরে একসঙ্গে এত গাছের উপস্থিতিতে মুগ্ধ তারা। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ছুটে আসছেন বৃক্ষপ্রেমীরা। গতকাল শুক্রবার সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমনই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ফুটে উঠেছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে ২৫ জুন থেকে পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে। গতকাল পরিবেশ মেলা শেষ হলেও মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা চলবে আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
এ বছর জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২৫-এর স্লোগান ‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মেলাটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বৃক্ষমেলা হলো একটি বার্ষিক আয়োজন। যেখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ, চারা, বীজ, সার এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি প্রদর্শন ও বিক্রি করা হয়।
এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। মেলায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, নার্সারি এবং পরিবেশবিদরা অংশ নিয়ে থাকেন। মেলায় গাছের পরিচর্যা, রোগবালাই এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনাও করা হয়।
এবারের বৃক্ষ মেলায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ৯২টি স্টল অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী মেলায় আসেন। প্রত্যেকেই ঘুরে ঘুরে গাছ দেখেন, গাছের সঙ্গে পরিচিত হন। গাছ ও চারা কেনেন।
বৃক্ষমেলার বন অধিদপ্তরের প্রদর্শনী কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, সারি সারি সাজানো রয়েছে ব্রোমেনিয়া রেড, নটো ক্যাকটাস, ওন্ডম্যান, ফেরো, হাওয়াযিয়া, ট্রাইকো সেরাস, সিলভার, ফেরো ক্যাকটাস, গোল্ডেন ব্যারেল, ব্রোমেলিয়া গ্রিন, স্টার ব্যাকটাস, সানবলসহ ২৫ জাতের ক্যাকটাস। বন অধিদফতরের কর্মী সিদ্দিক জানান, এই ক্যাকটাসগুলোর অধিকাংশ জাতই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মরুভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দেশীয় বাজারের এসব ক্যাকটাসের বেশ চাহিদা রয়েছে।
প্রদর্শনী কেন্দ্রে আরো শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বনসাই। এগুলোকে বামন গাছও বলেন কেউ কেউ। বনসাইয়ের মধ্যে রয়েছে- বাওবাব, কালোজাম, তেঁতুল, পাকুড়, প্যারাসুট, অশোক, অর্জুন, খেজুর, তমাল, হিজল, ব্রোফোলিয়া রেড, বাগানবিলাস, অ্যালোভেরা ও কামিনি।
রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা ইফতেখার আহমেদ সফেদা, আমলকী, আজোয়া খেজুরের চারা, বাঁশগাছ, আম, লেবু, কাঁঠাল, করমচা, বারোমাসি জলপাই ও জাম্বুরাগাছসহ প্রায় ২৫টির মতো গাছ কিনেছেন। এগুলো তিনি তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লাতে পাঠাবেন। এ বছর তিনি বৃক্ষমেলা থেকে দেড় লাখ টাকার গাছ কিনেছেন বলে জানান। গাছের প্রতি ভালোবাসা থেকেই প্রতি বছর বৃক্ষমেলা থেকে প্রচুর গাছ কেনেন ইফতেখার।
মহাখালী থেকে মেয়ে নিলুফারকে নিয়ে মা নায়লা জাহান বৃক্ষমেলায় এসেছেন। বেলকনির জন্য একটি অর্কিড গাছ কিনেছেন তারা। মেয়েকে নিয়ে পুরো বৃক্ষমেলা ঘুরবেন। বিভিন্ন ধরনের গাছের সঙ্গে মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেবেন। বাড়ি ফেরার সময় নিজের ছাদবাগানের জন্য বেশকিছু গাছ কিনে বাড়ি ফিরবেন বলে আমার দেশকে জানান নায়লা।
বৃক্ষমেলায় অংশ নিতে কাভার্ড ভ্যান ভর্তি করে দেশীয় খেজুরগাছ নিয়ে বরিশাল থেকে এসেছেন বেশ কয়েকজন নার্সারি মালিক। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বৃক্ষমেলায় তারা ২০ বছর ধরে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। মেলায় গাছ বিক্রি তাদের নার্সারি বেশ লাভবানও হচ্ছে বলে জানান তারা।