আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে শুধু যুদ্ধবিমান নয়, বরং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক অস্ত্র, ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইলই এখন সবচেয়ে বড় হুমকি। এসব হুমকি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে দেশগুলো বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের একটি তালিকা প্রকাশ হয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিস্তারের কারণে জাতীয় আকাশসীমা, কৌশলগত স্থাপনা ও বেসামরিক অবকাঠামো রক্ষায় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এখন অপরিহার্য।
এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কি?
এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হলো এমন সামরিক প্রযুক্তি, যা শত্রুপক্ষের বিমান, ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত, ট্র্যাক এবং ধ্বংস করতে সক্ষম। আধুনিক এসব ব্যবস্থা সাধারণত সমন্বিত প্রতিরক্ষা কাঠামো (Integrated Air Defence System–IADS) হিসেবে কাজ করে, যেখানে রাডার, ইন্টারসেপ্টর মিসাইল এবং কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম একসঙ্গে যুক্ত থাকে।
বিশ্ব প্রতিরক্ষা বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৪৬.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে এই বাজার ৮১.৯২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম
১. এস–৫০০ প্রোমিথিউস (রাশিয়া)
সবচেয়ে উন্নত কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ব্যালিস্টিক মিসাইল, হাইপারসনিক অস্ত্র এমনকি নিম্ন কক্ষপথের স্যাটেলাইট ধ্বংসে সক্ষম। সর্বোচ্চ পাল্লা ৫০০–৬০০ কিলোমিটার।
২. এস–৪০০ ট্রায়াম্ফ (রাশিয়া)
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত দীর্ঘপাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। বিমান, ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল মোকাবিলায় কার্যকর। পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার।
৩. থাড (যুক্তরাষ্ট্র)
উচ্চমাত্রার ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধে বিশেষায়িত। আকাশের বাইরে (Exo-atmospheric) মিসাইল ধ্বংস করতে সক্ষম।
৪. ডেভিডস স্লিং (ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্র)
ট্যাকটিক্যাল ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। আয়রন ডোম ও অ্যারো সিস্টেমের মধ্যবর্তী স্তরে কাজ করে।
৫. প্যাট্রিয়ট পিএসি–৩ (যুক্তরাষ্ট্র)
যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ১৭টির বেশি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৬. এস–৩০০ভিএম (রাশিয়া)
মোবাইল এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধে সক্ষম।
৭. অ্যাস্টার ৩০ স্যাম্প/টি (ফ্রান্স–ইতালি)
ইউরোপের অন্যতম আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে।
৮. এইচকিউ–৯ (চীন)
চীনের দীর্ঘপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম। বিমান ও ব্যালিস্টিক মিসাইল মোকাবিলায় ব্যবহৃত।
৯. বারাক–৮ (ভারত–ইসরায়েল)
স্থল ও নৌ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহারের জন্য তৈরি। ড্রোন ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিরোধে কার্যকর।
১০. আয়রন ডোম (ইসরায়েল)
স্বল্পপাল্লার রকেট ও মর্টার শেল প্রতিরোধে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইপারসনিক অস্ত্র ও ড্রোন যুদ্ধের যুগে প্রবেশ করায় এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এখন শুধু সামরিক শক্তির প্রতীক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মূল স্তম্ভ। আগামী দিনে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।