২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। সে সময় তার সরকারের ব্যর্থতা তদন্তে গঠিত কমিটির নেতৃত্ব দিতে চান সরকারপ্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এমন খবরে ক্ষোভে ফুঁসছেন ইসরায়েলের সাধারণ নাগরিকরা। খবর আল জাজিরার।
হামলার পর থেকেই সুপ্রিম কোর্টের কোনো বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি সর্বত্র শোনা যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, ৭ অক্টোবর নিহত বা বন্দি হওয়া ব্যক্তিদের স্বজন এবং জনমত জরিপও স্বাধীন কমিশনের পক্ষেই মত দিয়েছে।
এতদিন পর্যন্ত নেতানিয়াহু তার বা তার সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত এড়িয়ে যেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোষণা দেয়, নেতানিয়াহু একটি রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন, যেখানে তিনিই থাকবেন নেতৃত্বে। তার ঘনিষ্ঠ সংসদের স্পিকার আমির ওহানা এই কমিশনের সদস্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই কমিশনে ছয়জন সদস্য থাকবেন এবং তারাই নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করবেন। সরকার জানিয়েছে, ছয়টি নিয়োগের ক্ষেত্রেই প্রথমে সব দলের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে বিরোধী দল যদি তদন্ত প্রক্রিয়া বয়কট করে তাহলে ওহানাকে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হবে।
তদন্তের পরিধি নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের একটি দল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) পশ্চিম জেরুজালেমে বৈঠকে বসবে। কাকতালীয়ভাবে, একই দিনে তেল আবিবে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে নেতানিয়াহুর।
এদিকে সরকারের গাফিলতি তদন্তের কমিটিতে সরকারপ্রধানের উপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলের রাজনীতিবিদরা। ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা ইয়াইর গোলান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘স্বার্থের সংঘাত নয়, এটি আইনের আড়ালে সংগঠিত অপরাধ। আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তি উত্তর খুঁজছেন না, তিনি খুঁজছেন একটি অজুহাত।’ অন্যান্য বিরোধী নেতারাও প্রস্তাবিত তদন্তের সমালোচনা করেছেন।
ইসরায়েল বেইতেনু দলের নেতা আভিগদর লিবারম্যানও রাষ্ট্রীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে একটি হিব্রু প্রবাদ ব্যবহার করেন, যার অর্থ—’অপরাধবোধ নিজেই ধরা দেয়’।
এদিকে ৭ অক্টোবর নিহত ও বন্দি হওয়া ইসরায়েলিদের পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘অক্টোবর কাউন্সিল’ সরকারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘শোকাহত পরিবার, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি, বন্দিদের পরিবার, নিহতদের পরিবার, দক্ষিণ ও উত্তরের বাসিন্দা, রিজার্ভ সেনা এবং সব নাগরিকের মুখে বারবার থুথু ছুড়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি সরকার।’
সরকারের উদ্দেশে চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আপনারা তদন্তে বাধা দিতে বা সত্য আড়াল করতে পারবেন না। আমরা তা হতে দেব না। আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের প্রিয়জনদের স্মৃতির বিরুদ্ধে এবং আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।’