দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার সমুদ্র উপকূল থেকে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে আসার পর সম্প্রতি ওই তেলবাহী ট্যাংকারটি আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি।
এ নিয়ে চলতি মাসে ওই উপকূল থেকে দ্বিতীয়বারের মতো তেলবাহী জাহাজ আটক করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় তেলবাহী ট্যাংকার প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সেগুলো 'আটক' করার নির্দেশ দেন।
তার ওই নির্দেশের পর আবারও তেলবাহী ট্যাংকার আটকের ঘটনা ঘটলো।
এদিকে, দ্বিতীয় দফায় তেলবাহী ট্যাংকার আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে তারা "চুরি এবং অপহরণ" হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্পদ চুরি করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল ভেনেজুয়েলা।
"এই কর্মকাণ্ডের জন্য অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে," এক বিবৃতিতে বলেছে ভেনেজুয়েলা সরকার।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ বিশ্বের 'অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থা এবং সরকারের' কাছে তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
গতবারের মত এবারও ভেনেজুয়েলা উপকূল থেকে তেলবাহী ট্যাংকার আটক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড।
আটকের সময় জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম, যার নির্দেশে কোস্টগার্ড পরিচালিত হয়, তিনি সামাজিক যোগাযোম মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) অভিযানের সাত মিনিটের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন।
ছবির উৎস,Getty Images
পোস্টটিতে মিজ নোয়েম লিখেছেন, "২০শে ডিসেম্বর ভোরের কিছু আগে চালানো অভিযানে ভেনেজুয়েলা ছেড়ে আসা একটি তেলবাহী ট্যাংকার আটক করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড।"
অভিযানের ভিডিওতে মার্কিন হেলিকপ্টারগুলোকে একটি জাহাজের ডেকে অবতরণ করতে দেখা যাচ্ছে।
"এই অঞ্চলে মাদক সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত অননুমোদিত তেলের অবৈধ চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র," এক্সে নিজের পোস্টে লিখেছেন নোয়েম।
"আমরা তোমাদের খুঁজে বের করব এবং থামাব" যোগ করেন তিনি।
অভিযানের ভিডিওতে যে জাহাজটি দেখা যাচ্ছে, সেখানে 'সেঞ্চুরিস' লেখা রয়েছে।
'সেঞ্চুরিস' মূলতঃ পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ। কিন্তু বিবিসি ভেরিফাইয়ের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে জাহাজটি গ্রিস এবং লাইবেরিয়ার পতাকা টানিয়েও চলাচল করেছে।
মার্কিন ট্রেজারির অনুমোদিত জাহাজের তালিকায় এটির নাম নেই।
গত কয়েক সপ্তাহে ক্যারিবিয়ান সাগরে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর মধ্যেই মাদক চোরাচালানের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার একাধিক নৌকায় মারাত্মক হামলাও চালাতে দেখা গেছে।
ওইসব হামলায় প্রায় ১০০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌকাগুলোতে হামলা চালানো হলেও সেবিষয়ে জনসম্মুখে কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রকে।
এসব হামলার জেরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডে নজরদারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে দেশটির কংগ্রেস।
ছবির উৎস,Reuters
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর বিরুদ্ধে 'কার্টেল দে লস সোলস' নামে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এমন অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন মি. নিকোলা।
তারপরও তার এবং তার রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে "চুরি করা" তেল ব্যবহার করে "মাদক সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, খুন এবং অপহরণের জন্য নিজেদের অর্থায়ন" করার অভিযোগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে দ্বিতীয় দফায় তেলবাহী ট্যাংকার আটকের পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে বলেছেন, "অবৈধ অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে ফেলার জন্য... মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামুদ্রে অভিযান অব্যাহত রাখবে।"
"সহিংসতা, মাদক এবং বিশৃঙ্খলা পশ্চিম গোলার্ধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না," যোগ করেন মি. হেগসেথ।
ভেনেজুয়েলাকে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বড় মজুদ তেলের আবাসস্থল হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারি ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে দেশটি তেল রপ্তানির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
গত ১০ই ডিসেম্বর ভেনেজুয়েলার উপকূল হয়ে "গোপনে যাওয়ার সময়" একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার আটক করে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ঘটনার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে "অবরোধ" ঘোষণা করে "অবৈধ" তেলবাহী ট্যাংকার আটকের নির্দেশ দেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, স্কিপার নামে পরিচিত সন্দেহভাজন জাহাজটি "অবৈধ তেল পরিবহনের" সঙ্গে জড়িত ছিল। আটকের পর জাহাজটিকে মার্কিন বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।