ফরাসি একটি অনুসন্ধানী গণমাধ্যম ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) একটি বিশাল গোপন অস্ত্র চুক্তির তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলের খ্যাতনামা অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘এলবিট সিস্টেমস’-এর সঙ্গে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষর করেছে আমিরাত। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘ইন্টেলিজেন্স অনলাইন’ এই তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে ‘মিডল ইস্ট আই’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে এলবিট সিস্টেমস বড় অংকের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিলেও তখন ক্রেতা দেশের নাম গোপন রেখেছিল। তবে ইন্টেলিজেন্স অনলাইনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, সেই দেশটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত।
চুক্তির বিস্তারিত:
প্রযুক্তি: ইউএই এলবিট সিস্টেমসের তৈরি ‘জে-মিউজিক’ (J-MUSIC) নামক অত্যাধুনিক বিমান সুরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করেছে। এই প্রযুক্তি লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ভূমি থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের সেন্সর অকার্যকর করতে সক্ষম।
যৌথ উৎপাদন: চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এসব সিস্টেম সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভেতরেই যৌথ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদন করা হবে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সরকার এই চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে।
সময়কাল: চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য আট বছর সময় ধরা হয়েছে। এটি ইসরায়েলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানি চুক্তি।
সমালোচনা ও উদ্বেগ: মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অক্সফাম এই চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের আশঙ্কা, এ ধরনের অস্ত্র লেনদেন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং বেসামরিক জনগণের ক্ষতির কারণ হতে পারে। উল্লেখ্য যে, আমিরাতের বিরুদ্ধে সুদানের ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’সহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে সমর্থনের অভিযোগ রয়েছে।
আব্রাহাম চুক্তির প্রভাব: ২০২০ সালে ‘আব্রাহাম চুক্তি’র মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ইউএই-তে ব্যাপকভাবে সক্রিয়। ইতোমধ্যে এলবিট সিস্টেমস ও ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ আবুধাবিতে তাদের কার্যালয় স্থাপন করেছে।
গাজায় সাম্প্রতিক যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল কিছুটা চাপের মুখে থাকলেও তাদের অস্ত্র ব্যবসা থেমে নেই। সম্প্রতি দেশটি জার্মানির কাছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ‘অ্যারো-৩’ এবং রোমানিয়ার কাছে ২.২ বিলিয়ন ডলারের ‘স্পাইডার’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করেছে। এবার একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের বড় ক্রেতায় পরিণত হলো।