উন্নত দেশগুলো জনসংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক চিন্তায় পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জন্মহার বাড়াতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নানা সুযোগ সুবিধার ঘোষণা দিচ্ছে। তারপরও দম্পতিদের মাঝে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। আর এজন্য অভিনব এক কৌশল চালু করতে যাচ্ছে রাশিয়া।
দেশটি দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। এতে মস্কোকে বেশ জোড়ালভাবে অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি দেশটির নাগরিকদের মাঝে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তীব্র আকার ধারণা করেছে। এতে করে অনেকেই সন্তান জন্মদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
তবে সন্তান জন্মদানে যেন দম্পতিরা আগ্রহী হয় এজন্য রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। যা নিয়ে দেশটিতে তীব্র আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার নীতিনির্ধারকদের ধারণা, রাতে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে এতে মানুষ স্ক্রিন থেকে দূরে থাকবে এবং পরিবারকে বেশি সময় দেবে।
সন্তান নেওয়ার আগ্রহ বাড়বে। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে মানুষের ঘুমের সমস্যা বাড়ছে। যার ফলে কমছে দাম্পত্য সময় ও পারিবারিক যোগাযোগ। আর এতে জন্মহারে প্রভাব ফেলছে।
এদিকে জনসংখ্যা বাড়াতে আরও কিছু বিতর্কিত প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে মিনিস্ট্রি অব সেক্স গঠনের ভাবনা এবং সন্তান জন্ম দিলে আর্থিক ভাতা দেওয়ার সুপারিশ।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সন্তান জন্ম দিলে পরিবারকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার রুবল সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিয়ের পর প্রথম রাতে বিশেষ স্থানে সময় কাটানোর জন্য আর্থিক সহায়তার কথাও ভাবা হচ্ছে।
রুশ সরকার মাতৃত্বকালীন সুবিধার পাশাপাশি বাবাদের জন্যও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রসবকালীন ভাতা, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। এছাড়া ১০টির বেশি সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীদের জন্য সোভিয়েত আমলের ‘মাদার হিরোইন’ পুরস্কার পুনরায় চালু করা হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকেও জন্মহার কমে যাওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গেল বছরের শেষ দিকে তিনি কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজ বা কফি বিরতির সময় সন্তান নেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিলেন। রাশিয়ার পরিসংখ্যান সংস্থা রোসস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটিতে মাত্র ১২ লাখ ২২ হাজার শিশুর জন্ম নথিভুক্ত করা হয়েছে। যা ১৯৯৯ সালের পর সর্বনিম্ন।