লাতিন আমেরিকায় সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার ধারাবাহিকতায় পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন হামলায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ভেনেজুয়েলার একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ড (সাউথকম) জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের নির্দেশে সোমবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় তিনটি নৌযানে ‘প্রাণঘাতী কাইনেটিক হামলা’ চালানো হয়। সাউথকম এক বিবৃতিতে জানায়, এসব হামলায় মোট আটজন নিহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম নৌযানে তিনজন, দ্বিতীয়টিতে দুজন এবং তৃতীয়টিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতরা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল—এমন দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বর থেকে ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবীয় সাগরে ডজনখানেক নৌযানে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। এসব হামলাকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর হাতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মার্কিন আইনপ্রণেতারা এসব হামলায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেপ্টেম্বরে একটি নৌযানে প্রথম হামলার পর বেঁচে যাওয়া দুজনকে লক্ষ্য করে দ্বিতীয় দফা হামলার নির্দেশ তিনি নিজে দিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন আইনপ্রণেতারা।
এদিকে পেন্টাগন জানিয়েছে, তারা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও মেক্সিকো উপসাগরে যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে মাদক পাচার দমনের লক্ষ্যে।
ভেনেজুয়েলা বলেছে, এসব হামলা ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি মূলত ‘বহিরাগত শক্তিগুলোকে ভেনেজুয়েলার অগাধ তেল ও গ্যাস সম্পদ লুটে নেওয়ার সুযোগ করে দিতেই’ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করার আগেই এই অভিযোগ তোলে কারাকাস। পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ধরে নিচ্ছি, আমরা তেলটা রেখে দেব।”
ত্রিনিদাদের বিমানবন্দর ব্যবহার করবে মার্কিন বাহিনী
লাতিন আমেরিকার জলসীমায় সর্বশেষ এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার বড় আকারের সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করছে। সোমবার ত্রিনিদাদ ও টোবাগো জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সরকার জানায়, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তাদের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এসব বিমানবন্দর ব্যবহার করা হবে মূলত ‘লজিস্টিক’ কার্যক্রমে, যার মধ্যে সরবরাহ পুনর্গঠন এবং নিয়মিত জনবল পরিবর্তনের কাজও রয়েছে।
ক্যারিবীয় এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে কাছের স্থানে মাত্র ১২ কিলোমিটার (৭.৪ মাইল) দূরে অবস্থিত। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু নেতার ভিন্ন অবস্থানের বিপরীতে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এই উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী কামলা প্রসাদ-বিসেসার বলেছেন, মাদক পাচারকারীরা তার দেশের নাগরিকদের হত্যা করার চেয়ে তিনি তাদের ‘টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যেতে’ দেখতেই বেশি রাজি।
এর জবাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো আবারও ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করবে। সোমবার ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল টেলেসুর এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা