Image description

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন ডিলান ফ্রেডম্যান এবং কেটি রজার্স। ডিলানের নাম উল্লেখ না করলেও ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কেটি রজার্সকে নিয়োগই দেওয়া হয়েছে আমার সম্পর্কে কেবল বাজে কথা লেখার জন্য। সে একজন তৃতীয় শ্রেণির সাংবাদিক; ভেতর ও বাইর—উভয় দিক থেকেই কুৎসিত।’

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে তথ্য-উপাত্তভিত্তিক একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। আর এতেই চটেছেন ৭৯ বছর বয়সি ট্রাম্প। 

বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’–এ দেওয়া এক পোস্টে ওই প্রতিবেদনের সহলেখক এক নারী সাংবাদিককে ‌‘কুৎসিত’ বলে আক্রমণ করেন তিনি।

এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই আরেক নারী সাংবাদিককে ‘চুপ করো, পিগি’ বলে ধমক দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই রেশ না কাটতেই আবারও নারী সাংবাদিককে লক্ষ্য করে তার এই কটুকাটব্য জেন্ডার–সংবেদনশীল আচরণ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সকালে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যর্থ হতে চলা নিউইয়র্ক টাইমসের ওই জঘন্য লোকগুলো আবারও তাদের কাজ শুরু করেছে।’

প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন দুজন—পত্রিকাটির এআই ইনিশিয়েটিভ টিমের ডিলান ফ্রেডম্যান এবং হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি কেটি রজার্স। ট্রাম্প তার পোস্টে পুরুষ সাংবাদিক ডিলানের নাম উল্লেখ না করলেও ব্যক্তিগত আক্রমণের লক্ষ্য বানিয়েছেন নারী সাংবাদিক কেটিকে।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রতিবেদক কেটি রজার্সকে নিয়োগই দেওয়া হয়েছে আমার সম্পর্কে কেবল বাজে কথা লেখার জন্য। সে একজন তৃতীয় শ্রেণির সাংবাদিক; যে ভেতর ও বাইর—উভয় দিক থেকেই কুৎসিত।’

ওই পোস্টে ট্রাম্প এ বছর তিনি কত কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তারও ফিরিস্তি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, জনমত জরিপে তিনি এখন সর্বকালের সেরা অবস্থানে আছেন। যদিও দাবিটি ভুয়া; বরং দ্বিতীয় মেয়াদের সর্বোচ্চ অবস্থানের তুলনায় এখন তার জনসমর্থন অনেকটাই কমেছে।

 

নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এমন একটা দিন আসবে, যখন আমারও শক্তি ফুরিয়ে আসবে, এটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। কিন্তু আমার জন্যে সেই সময়টা এখনো আসেনি নয়।’ 

সম্প্রতি বিভিন্ন শারীরিক ও কগনিটিভ টেস্টে তিনি দারুণ ফল করেছেন বলেও দাবি করেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরের শুরুর দিকে ট্রাম্প একবার এমআরআই স্ক্যান করিয়েছিলেন। কিন্তু কী কারণে সেই পরীক্ষা করানো হয়েছিল, তা এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। পত্রিকাটি জানিয়েছে, ট্রাম্পের স্বাস্থ্য নিয়ে তারা বিস্তারিত প্রশ্ন পাঠিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি।

এর বদলে প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে উলটো বাইডেনকে কটাক্ষ করে দাবি করেন, ট্রাম্প ও তার প্রশাসন সব সময়ই ‘খোলামেলা ও স্বচ্ছ’।

নিজের পোস্টে নিউইয়র্ক টাইমসকেও একহাত নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি পত্রিকাটিকে ‘শিগগিরই বন্ধ হতে চলা’ প্রতিষ্ঠান বলে আখ্যা দেন। যদিও পত্রিকাটি এখন বেশ লাভজনক অবস্থানে রয়েছে এবং তাদের ডিজিটাল গ্রাহকসংখ্যাও বাড়ছে।

মানহানির অভিযোগে নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলাটির ভিত্তি বেশ দুর্বল এবং এটি খারিজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এ দিকে ট্রাম্পের কুরুচিকর মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। বুধবার পত্রিকাটির একজন মুখপাত্র সাংবাদিক কেটি রজার্স ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দ্য টাইমসের প্রতিবেদনটি নির্ভুল এবং সরাসরি তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। বাজে নামে ডাকা বা ব্যক্তিগত আক্রমণ—কোনো কিছুই সত্যকে বদলাতে পারবে না। ভয়ভীতি দেখানোর এমন কৌশলের মুখেও আমাদের সাংবাদিকেরা বর্তমান প্রশাসনের সংবাদ সংগ্রহে বিন্দুমাত্র পিছপা হবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেটি রজার্সের মতো দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিকেরাই প্রমাণ করেন যে কীভাবে একটি স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে তাদের সরকার ও নেতাদের আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে।’