গুগলের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সাম্রাজ্য ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ চেয়ে শুক্রবার এক ফেডারেল বিচারকের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছে মার্কিন সরকার। সরকারি আইনজীবীদের অভিযোগ, টেক জায়ান্টটি তাদের ব্যবসায়িক পদ্ধতি পরিবর্তনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখার কৌশলের অংশ।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, গুগলের বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা—অ্যাড টেক ‘স্ট্যাক’—নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় সরকার তাদের চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ওয়েব প্রকাশক এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করা এই টুলগুলোর বাজারে গুগল দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছে বলে অভিযোগ।
এ বছর গুগলের বিরুদ্ধে এটি দ্বিতীয় বড় অ্যান্টিট্রাস্ট চ্যালেঞ্জ। সেপ্টেম্বরে এর আগেও সার্চ ইঞ্জিন ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার দাবি খারিজ করেছিলেন বিচার বিভাগের এক বিচারক। অ্যাপল, অ্যামাজন, মেটার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া শক্তি কমাতে মার্কিন সরকারের বড় উদ্যোগের অংশ হিসেবে এসব মামলা চলছে। যদিও এখন পর্যন্ত ফলাফল মিশ্র।
শুক্রবার যুক্তিতর্ক শুরুর আগে দাখিল করা নথিতে ডিওজে ও কয়েকটি অঙ্গরাজ্য অভিযোগ তোলে, গুগল দু’টি আন্তঃসংযুক্ত বিজ্ঞাপন বাজার সম্পূর্ণ দখলে নিয়ে প্রতিযোগিতা ধ্বংস করেছে। তাদের বক্তব্য, প্রকাশকদের বিজ্ঞাপন বিক্রি, এক্সচেঞ্জে লেনদেন, এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের চাহিদা—সব ক্ষেত্রেই গুগল নিজের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
ডিওজে উল্লেখ করে, গুগল একসময় তাদের এই আধিপত্যের তুলনা করেছিল ঠিক যেমন গোল্ডম্যান স্যাকস নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মালিক হলে হতো। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গেইল স্লেটার এক্স-এ লিখেছেন, বাজারে গুগলের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই, কারণ এতে নতুন প্রতিযোগীর জন্য জায়গা তৈরি হবে।
অন্যদিকে গুগলের দাবি, সরকারের প্রস্তাবিত ব্যবস্থা অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ। এতে প্রকাশক, বিজ্ঞাপনদাতা এবং ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোম্পানি বলছে, তাদের সমন্বিত বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি বাজারে দক্ষতা ও উদ্ভাবন বাড়ায়, আর এগুলো ভেঙে ফেলা প্রযুক্তিগতভাবেও প্রায় অসম্ভব।
আগেই দেওয়া প্রাথমিক রায়ে ফেডারেল বিচারক লিওনি ব্রিঙ্কেমা বলেন, গুগল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশক অ্যাড সার্ভার এবং অ্যাড এক্সচেঞ্জ—উভয় ক্ষেত্রেই নিজের একচেটিয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। এরপরই চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শুরু হয়। প্রসিকিউটররা এখন গুগলকে অ্যাডএক্স এক্সচেঞ্জ বিক্রি করতে বাধ্য করা এবং গুরুত্বপূর্ণ নিলাম প্রযুক্তি ওপেন সোর্স করে দেওয়ার মতো কঠোর পদক্ষেপ দাবি করছেন।
অ্যান্টিট্রাস্ট পর্যবেক্ষকদের মতে, বিচারের ভবিষ্যৎ জটিল। আমেরিকান ইকোনমিক লিবার্টিজ প্রজেক্টের লরেল কিলগোর বলেন, বিচারক ব্রিঙ্কেমা মনে করছেন, গুগল আপিল করায় এই প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে।
১১ দিনব্যাপী এই বিচারে ১৯ জন সাক্ষী ও সাতজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। সার্চ ইঞ্জিন মামলায় বিচারক এআই প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন বিবেচনায় সতর্ক থাকার কথা বলেছিলেন, তবে অ্যাড টেক মামলায় ডিওজে দাবি করছে, এআই বরং গুগলের বাজার দখল আরও শক্তিশালী করবে।
মামলার চূড়ান্ত রায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঘোষিত হবে।