গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। কিন্তু তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বন্ধ তো নয়, বরং রূপ নিচ্ছে আরও ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধে। পূর্বের দাবি থেকে সরে এসে ট্রাম্প এখন স্বীকার করছেন, এই যুদ্ধ থামানো তার কল্পনার চেয়েও কঠিন কাজ।
২২ অক্টোবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি'র এক নিবন্ধে ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
গাজা সফলতার পথ ইউক্রেনে বন্ধ
চলতি মাসের শুরুর দিকে মিশরে একত্রিত হন ট্রাম্প সহ ২০টিরও বেশি দেশের সরকার প্রধান। গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সে সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, "এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।" অনেকেই ধারণা করেছিলেন, গাজার মতো হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন ট্রাম্প। তবে সেই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি।
বিবিসি'র নিবন্ধে বলা হয়, গাজা ইস্যুতে ট্রাম্প ও তার দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে ফের সৃষ্টি করা কঠিন।
গাজায় ট্রাম্পের প্রভাব:
গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে এগিয়ে যায়। ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়, ফলে ইসরায়েলের ওপর তাঁর প্রভাব অনেক বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।
ইউক্রেনে প্রভাবহীনতা:
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের কোনো প্রভাব বলয় নেই। বুদাপেস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার 'পুরোনো অস্ত্র'
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ক্রেমলিনের ওপর চাপ বাড়ানোর পথেই হাঁটছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং আরব ও ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এরই মধ্যে রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকওয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার এসব পুরনো অস্ত্র যুদ্ধ বন্ধে তেমন কাজে আসছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, "রাশিয়াকে থামাতে মার্কিন এসব নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ ভ্লাদিমির পুতিন কয়েক মাসের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করবেন। নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ অবশ্যই ইতিবাচক, কিন্তু ততটা শক্তিশালী নয়।"
পুতিনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে না তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে ইচ্ছুক। রাশিয়াকে থামাতে ট্রাম্পের আরও শক্ত পদক্ষেপ এবং চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তবে ট্রাম্প বুঝতে পারছেন, এমন করলে যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্প প্রায়ই নিজের 'চুক্তি করার দক্ষতা' নিয়ে গর্ব করেন এবং দাবি করেন সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারবেন। কিন্তু পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনটিই যুদ্ধ বন্ধের সমাধান বের করতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই 'চুক্তির নেশা' ও মুখোমুখী আলোচনার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসকে নিজের পক্ষেই ব্যবহার করছেন।