শরতের শেষে থেমে গেছে বৃষ্টি, দরজায় কড়া নাড়ছে হেমন্ত। কক্সবাজারসহ উপকূল জুড়ে শুরু হচ্ছে নতুন লবণ মৌসুমের প্রস্তুতি। কিন্তু গত মৌসুমের উত্পাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখনো মাঠে পড়ে আছে ৫ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য। এর মধ্যেই নতুন করে লবণ আমদানির চেষ্টা শুরু হয়েছে। ফলে চাষিদের মধ্যে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
বিসিকের তথ্যমতে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের চার উপজেলায় ৬৯ হাজার একর জমিতে প্রায় ৪১ হাজার চাষি লবণ উত্পাদনে যুক্ত ছিলেন। গত মৌসুমে উত্পাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার টন, যা ৬৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আগামী নভেম্বরে শুরু হতে যাওয়া মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ লাখ ১৮ হাজার টন।
ঈদগাঁওর লবণচাষি রিদুয়ানুল হক বলেন, প্রতিমণ লবণের দাম এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কিন্তু খরচ হয়েছে সাড়ে ৩৫০ টাকারও বেশি। তিন কানি (প্রায় ১.২০ একর) জমি চাষ করতে ইজারা, পলিথিন, শ্রমিক মজুরি, লবণ মাঠ প্রস্তুতসহ সব কাজে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু লবণ বিক্রির আয় দিয়ে সেই খরচের টাকাও উঠছে না। লোকসানের বোঝা বইতে হচ্ছে সকলকে। সেটি মাথায় থাকায় আসন্ন মৌসুমে মাঠে নামব কি না, এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
চাষিদের দাবি, দেশে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও একটি চক্র কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বিদেশি লবণ আমদানির চেষ্টা করছে। ‘লবণ উত্পাদনকারী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদে’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উত্পাদন হলেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। বিসিক এখন চাষিদের চেয়ে শিল্প মালিকদের স্বার্থেই বেশি কাজ করছে।
বাংলাদেশ সল্টেড অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল শুক্কুরের অভিযোগ, ঢাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা তথ্য দিয়ে লবণ আমদানির অনুমতি নিতে সচিবালয়ে তত্পর। এতে লবণচাষিরা মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা দেশের স্বনির্ভর লবণশিল্পের জন্য বড় হুমকি।
কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, লবণশিল্প শুধু একটি উত্পাদন খাত নয়- এটি উপকূলীয় মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িত। চাষিদের টিকিয়ে রাখতে না পারলে তাদের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্যদিকে বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁঁইয়া দাবি করেন, মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুত রয়েছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ লবণ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, লবণ আমদানি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি রয়েছে, যারা সার্বিক দিক বিবেচনা করেই আমদানির প্রয়োজন আছে কি না তা নির্ধারণ করেন। বিসিক মাঠ পর্যায়ে চাষিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং তালিকা তৈরি করে-কার কাছে কত লবণ রয়েছে, তা আমরা নির্ভুলভাবে নথিভুক্ত করি।
আমদানির ফলে চাষিরা লবণ উত্পাদনে আগ্রহ হারাতে পারেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, যদি এ সময় আমদানি করা হয়, তাহলে চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হবে এবং তারা মাঠে নামতে আগ্রহ হারাতে পারেন। তবে সরকার এ বিষয়ে সচেতন। বৈঠকগুলোতে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনায় আসছে, যাতে চাষিরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন।