
নেপালে জেন জি আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও নিরুদ্দেশ! এ অবস্থায় কী হবে ওলির দল সিপিএন-ইউএমএল (কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল–ইউনিফায়েড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-এর? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাঁক খাচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক মহলে।
জানা যায়, ওলির দল সিপিএন-ইউএমএল নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওলি না থাকলে পরবর্তী শীর্ষ নেতা কে হতে পারেন, তা নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে দলের ভেতর।
গত ৮ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পরও পদত্যাগে অনড় ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ওলি। কিন্তু এর পরদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সিংহ দরবার, শীতল নিবাসসহ বহু সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায়। ওলির ভক্তপুর, তেহ্রাথুম ও ঝাপার বাসভবনসহ ইউএমএল কার্যালয়েও আগুন দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতেই ৯ সেপ্টেম্বর ওলি পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে আর সামনে আসেননি তিনি।
দলের ভেতর অস্থিরতা, মতবিরোধ
ওলির অনুপস্থিতিতে ইউএমএল নেতৃত্বে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর পোখরেল দলীয় বৈঠকে স্পষ্ট করেছেন, এখনই নেতৃত্ব বদলের সময় নয়; অগ্রীম সাধারণ সম্মেলনের মাধ্যমেই বিষয়টি আলোচনায় আসবে।
তবে বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে দলে কোনো ঐকমত্য নেই। ইশ্বর পোখরেল, সুরেন্দ্র পান্ডে, অষ্টলক্ষ্মী শাক্য বা বিষ্ণু পাউডেল—কেউই একে অপরকে মেনে নিতে রাজি নন। তরুণ নেতাদের মধ্যেও (যেমন- যোগেশ ভট্টরাই ও গোকর্ণ বিস্তা) যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা নেই। ফলে অনেকে স্বীকার করছেন, ‘ওলি ছাড়া আমাদের কোনো ঐক্যবদ্ধ মুখ নেই।’
দল পুনর্গঠনে অগ্রাধিকার
ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় কাঠামো পুনর্গঠনকেই এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ইউএমএল নেতারা। শুধু কাঠমান্ডুতেই ধ্বংস হয়েছে ইউএমএলের ৬২টি অফিস। সারাদেশে আরও বহু কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। দলীয় নেতারা কর্মীদের নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা ও ত্রাণকাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির নেতৃত্বাধীন সরকার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। ইউএমএলও ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ভোট বর্জন করলে সেনাশাসন বা বিদেশি হস্তক্ষেপের হতে পারে।
তবে ওলির ছায়া এখনও ভর করে রয়েছে ইউএমএলের ওপর। অনেকে আশঙ্কা করছেন, ওলির অনুপস্থিতিতে দলটি ভেঙে পড়তে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, অতীতের মতো ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতোই হয়তো উঠে দাঁড়াবে দলটি।
এখন প্রশ্ন হলো—ইউএমএল কি ওলিকে ছাড়া নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, নাকি সাধারণ সম্মেলনের আগ পর্যন্ত দুর্বল হলেও তার নেতৃত্বেই টিকে থাকতে হবে?
সূত্র: খবর হাব, কাঠমান্ডু পোস্ট