Image description

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর প্রথমবারের মতো নয়াদিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে উভয়পক্ষ ‘ইতিবাচক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বৈঠকের পর দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘মার্কিন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ ১৬ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’

এর কিছুক্ষণ পর ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ওই বৈঠকের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, উভয় দেশই বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া এবং চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 

বিবৃতিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের স্থায়ী গুরুত্ব স্বীকার করে আলোচনাকে ইতিবাচক ও অগ্রগতিমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে প্রাথমিকভাবে উভয়পক্ষের মাঝে চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে উভয় দেশের স্বার্থে দ্রুত একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে যোগ দিতে ব্রেন্ডান লিঞ্চ নেতৃত্বাধীন মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল সোমবার রাতে নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। ভারত সরকারের একটি সূত্র বলেছে, এই বৈঠককে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত ষষ্ঠ দফার আলোচনা হিসেবে দেখা হয়নি, বরং এটি মূল বৈঠকের জন্য একটি ‘প্রস্তুতিমূলক পর্ব’।

আগে থেকে জারি থাকা ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি গত ৩০ জুলাই নয়াদিল্লির ওপর জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার কাছে থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত এই শুল্ক গত ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান অবনতি ঘটেছে।

ভারত ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে ‘অন্যায্য’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এই সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি বোধগম্য নয়। কারণ রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা হলো চীন এবং সর্বাধিক এলএনজি কিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের অর্থনীতিকে ‘মৃত’ বলে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে তার বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনাকে ‘রক্তের অর্থ’ বলে মন্তব্য করেন। ভারতকে নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এই ধরনের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি করে।

তবে গত সপ্তাহে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হতে শুরু করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং তিনি আশাবাদী, এর সফল পরিণতি ঘটবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার প্রিয় বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আগামী সপ্তাহগুলোতে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। আমি নিশ্চিত, উভয় দেশের জন্য একটি সফল চুক্তিতে পৌঁছাতে কোনও ধরনের অসুবিধা হবে না।’’

এর পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে পোস্ট করে একই ধরনের মত প্রকাশ করেন এবং বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক অংশীদার। তিনি লিখেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের বাণিজ্য আলোচনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের সীমাহীন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে। আমাদের দলগুলো যত দ্রুত সম্ভব আলোচনাটি শেষ করতে কাজ করছে... আমিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। আমাদের দুই দেশের জনগণের উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আলোচনার সূচনা হওয়ার পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল, শরৎকালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপ চূড়ান্ত হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ষষ্ঠ দফার বৈঠক আগামী ২৫-২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়।

সূত্র: রয়টার্স