
রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে অতি শক্তিশালী ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে সমুদ্র ও উপকূলীয় জনপদ। ভূমিকম্পটির তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তাৎক্ষণিকভাবে ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার বিশাল সুনামি ঢেউ সৃষ্টি হয়, যা রাশিয়া ও জাপানের উপকূলজুড়ে আছড়ে পড়ে।
সুনামির জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বহু এলাকা তলিয়ে গেছে। বহু ঘরবাড়ি ও বন্দর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পানির নিচে চলে যায়। রাশিয়া ও জাপানের বহু উপকূলবর্তী শহরে জরুরি ভিত্তিতে জনসাধারণকে সরিয়ে নেয়া হয়। সুনামির পর জাপানের উপকূলে চারটি বিশাল তিমি মৃত অবস্থায় ভেসে আসে, যা সাগরের গভীরে ক্ষয়ক্ষতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এই সতর্কতার মধ্যেই জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের সব কর্মীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুনামি সতর্কতার কারণে সব কর্মীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে রেকর্ডকৃত ষষ্ঠ বৃহত্তম ভূমিকম্প। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কামচাটকা উপদ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্টের কাছাকাছি, যা সুনামি সৃষ্টির জন্য আরও বিপজ্জনক করে তোলে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে ৫২টি দেশ ও অঞ্চলকে সুনামি সতর্কতায় রাখা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, জাপান, ইকুয়েডর, হাওয়াই, চিলি, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, ফিজি, ফিলিপাইনসহ বহু দ্বীপ ও উপকূলবর্তী দেশ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো স্যাটেলাইট ও লাইভ ভিডিওতে তলিয়ে যাওয়া ভবন, গাড়ি ভেসে যাওয়া, বন্দর ভেঙে পড়া এবং জনগণের আতঙ্কিত ছুটোছুটি তুলে ধরা হয়েছে।
ভূমিকম্প-পরবর্তী আফটারশক ফের সুনামির আশঙ্কা তীব্রতর করেছে, বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষকে সমুদ্রতীর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়েছে। বর্তমানে জরুরি অবস্থা চলছে কামচাটকা ও জাপানের বহু এলাকায়। প্রশাসন, উদ্ধারকারী দল ও সেনাবাহিনী একযোগে কাজ করছে মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায়।
এদিকে বুধবার (৩০ জুলাই) ভোরে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর তিনটি ভিন্ন মাত্রার ঢেউয়ের আশঙ্কা অনুযায়ী বিশ্বের ৫২টি দেশ ও অঞ্চল এই সতর্কতার আওতায় এসেছে। তিন মিটারের বেশি উচ্চতার সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে ৩টি দেশ ও অঞ্চল। এগুলো হচ্ছে রাশিয়া,ইকুয়েডর এবং উত্তর-পশ্চিম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। এদিকে, এক থেকে তিন মিটার ঢেউয়ের আশঙ্কায় রয়েছে ১৪টি দেশ ও অঞ্চল। এদের মধ্য রয়েছে চিলি, কোস্টারিকা, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, গুয়াম, হাওয়াই, জাপান, জার্ভিস আইল্যান্ড, জনস্টন অ্যাটল, কিরিবাতি, মিডওয়ে আইল্যান্ড, পালমিরা আইল্যান্ড, পেরু, সামোয়া ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ।
এদিকে, শূন্য দশমিক তিন থেকে এক মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের সতর্কতায় রয়েছে ৩৫টি দেশ ও অঞ্চল। এসব হচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, তিউনিসিয়া, টোঙ্গা, তুভালু, ভানুয়াতু, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, এল সালভাদর, কুক আইল্যান্ডস, কেরমাডেক দ্বীপপুঞ্জ, কসরে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, পিটকায়ার্ন, চুক, পোহ্নপেই, নাউরু, নিউ ক্যালেডোনিয়া, নিয়ুয়ে, প্যালাউ, পানামা, উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, তাইওয়ান, হাওল্যান্ড ও বেকার দ্বীপপুঞ্জ, জন্সটন অ্যাটল, জার্ভিস আইল্যান্ড, ওয়েক আইল্যান্ড, টোকেলাও।
ইতিমধ্যে রাশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সুনামির ঢেউ ৩-৪ মিটার পর্যন্ত উঠেছে, এবং উপকূলবর্তী শহরগুলো থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে হাজারো মানুষকে।বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভূমিকম্পের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে জনসচেতনতা ও সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।সুনামির সম্ভাব্য ঢেউ যেকোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে, তাই সব দেশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।