
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপের মুসলিম আমব্রেলা সংগঠনগুলো ‘গাজা ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার ব্রাসেলস প্রেসক্লাবে আয়োজিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বেলজিয়ামের মুসলিম নির্বাহী পরিষদের প্রেসিডেন্ট মেহমেত উস্তুন।
ঘোষণাপত্রে ইউরোপের ১৫ হাজারেরও বেশি মসজিদ ও ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়।
ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় উপস্থাপিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ।
পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে আবাসিক এলাকা, অবকাঠামো এবং জীবিকার উৎস। খাদ্য ও পানির জন্য সংগ্রামে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে, আর মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে—যা এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের রূপ নিচ্ছে।
ঘোষণাপত্রে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা অপসারণ, বন্দিদের মুক্তি এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, যুদ্ধের নামে সংগঠিতভাবে অবকাঠামো ধ্বংস, জনগণের জীবন-জীবিকার নিশ্চিহ্নকরণ এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ‘গণহত্যার’ শামিল।
এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
ঘোষণাপত্রে সাত দফা দাবিও উত্থাপন করা হয়—
১. অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও গণহত্যা বন্ধ
২. সব বন্দি ও আটক ব্যক্তিদের মুক্তি
৩. বাধাহীন মানবিক সহায়তা প্রবেশাধিকার
৪. আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ
৫. আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত
৬. গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ও নিরাপত্তা
৭. ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাধান
ঘোষণাপত্রে পশ্চিম তীরসহ অধিকৃত ভূখণ্ডে দখল, ভূমি দখল ও অবৈধ বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এতে উদ্বেগ জানানো হয় যে, ইউরোপের অনেক দেশের প্রতিক্রিয়া এখনো প্রতীকী মাত্র, কার্যত দৃশ্যমান কোনো কূটনৈতিক বা নীতিগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিকদের ‘গাজা স্থায়ীভাবে দখল’ ও ‘ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন’-সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়েও তীব্র উদ্বেগ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সুপ্রিম কাউন্সিল সদস্য ও এশিয়ান ইসলামিক কমিউনিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী হাসিম মোহাম্মেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন— ডেনিশ মুসলিম ইউনিয়নের আহমেদ ডেনিজ, ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর ইসলাম-এর ইব্রাহিম আলসি, কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল অফ মুসলিমস ইন জার্মানির জেকেরিয়া আলতুগ, ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিউনিটিজ অ্যান্ড অর্গানাইজেশন্স অব ইতালির ইয়াসিন বাড়াদাই, ইসলামিক কাউন্সিল অব নরওয়ের মাসুম জুবাইরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বহু সাংবাদিক।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সংলাপ অব্যাহত রয়েছে এবং চরমপন্থীদের উসকানিতে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মাঝে বিভাজন ঘটাতে দেয়া হবে না।
ঘোষণাপত্রের সমাপ্তিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের কষ্ট ও আত্মত্যাগ আমাদের কাছে অমূল্য। আমরা শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ে তাদের পাশে আছি।