Image description

কেনিয়ায় গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভের ৩৫তম বার্ষিকীতে রাজধানী নাইরোবিতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সর্বশেষ এই সরকারবিরোধী বিক্ষোভে দেশজুড়ে ১১ জন নিহত হয়েছে।]

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

গত মাসে পুলিশ হেফাজতে ব্লগার আলবার্ট ওজওয়াংয়ের মৃত্যুর পর বিক্ষোভ নতুন করে তীব্রতা পায়। সরকারের প্রতি ক্ষোভ থেকে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

রয়টার্সের একজন প্রতিবেদক নাইরোবির কাংগেমি এলাকায় পুলিশের গুলি চালানোর দৃশ্য দেখেছেন। পরে এক বিক্ষোভকারী রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় নিথর হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কাংগেমির ইগল নার্সিং হোম জানিয়েছে, আহত অবস্থায় ছয়জনকে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। কেনিয়াট্টা ন্যাশনাল হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা ২৪ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

 

সশস্ত্র গ্যাং এবং পুলিশের যৌথ অভিযান

কেনিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, দেশজুড়ে ১১ জন নিহত এবং ৫২ জন পুলিশ আহত হয়েছে। তবে কার গুলিতে এই প্রাণহানি ঘটেছে, তা পুলিশ জানায়নি।

পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদনে প্রাণহানি, আহত, যানবাহন ক্ষতি এবং লুটপাটের একাধিক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।’

২০২৪ সালের জুনে যুবাদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ট্যাক্স বাড়ানোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ পরে দুর্নীতি, পুলিশি সহিংসতা এবং সরকারবিরোধীদের নিখোঁজ হওয়ার মতো ইস্যুতে বিস্তৃত হয়। সেই থেকে নাইরোবিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

সোমবার পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং পানি নিক্ষেপ করে শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীরা কাংগেমি থেকে নাইরোবি শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।

ঘণ্টা কয়েক পর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। রয়টার্সের প্রতিবেদক জানান, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ গুলি চালায়।

সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনসিএইচআর) জানিয়েছে, তারা ‘অসংখ্য হুডি পরা কর্মকর্তা, যারা ইউনিফর্মে ছিলেন না, অচিহ্নিত গাড়িতে চলাফেরা করতে দেখেছে।’

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুলিশের ইউনিফর্ম থাকা এবং সহজে চিহ্নিত হওয়া বাধ্যতামূলক, কারণ গত বছর অভিযোগ ওঠে, সাদা পোশাকের পুলিশ বিক্ষোভে গুলি চালায়।

কেএনসিএইচআর আরও জানায়, পুলিশ ও সশস্ত্র গ্যাং একসঙ্গে নাইরোবি এবং এলডোরেট এলাকায় চাবুক ও চাপাতি নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছিল।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিয়েরি, এমবু এবং নাকুরুতে বিক্ষোভ হয়েছে। নাকুরুতে ঘোড়ায় চড়া পুলিশ পাথর নিক্ষেপকারী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।

পুলিশ নাইরোবির প্রবেশমুখের প্রধান রাস্তা অবরোধ করে এবং শহরের ভেতর যান চলাচল সীমিত করে। এতে রাস্তাগুলো ফাঁকা হয়ে যায়, শুধু পায়ে হেঁটে আসা বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। বেশিরভাগ স্কুল এবং অন্তত একটি শপিং মল বন্ধ রাখা হয়।

‘উচ্চ সতর্কতায়’ নিরাপত্তা বাহিনী

কেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিপচুম্বা মুরকমেন গত মাসে বিক্ষোভকে ‘অসন্তোষের ছদ্মবেশে সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। রোববার তিনি বলেন, সরকার জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ মিছিলে অনুপ্রবেশ করে যারা বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে চায়, তাদের মোকাবেলায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।’

প্রতিবছর ৭ জুলাই কেনিয়ায় ‘সাবা সাবা’ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০ সালের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মই-এর সরকারের বিরোধীরা বহুদলীয় গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

এই আন্দোলনের দুই বছর পর কেনিয়ায় দুই দশকের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

৩১ বছর বয়সি ব্লগার এবং শিক্ষক ওজওয়াংয়ের মৃত্যুর পর জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। গত মাসে একের পর এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, ২৫ জুন দেশজুড়ে বিক্ষোভে ১৯ জন নিহত হয়। ওজওয়াংয়ের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং সংসদ অভিযান বিক্ষোভের প্রথম বর্ষপূর্তিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

ওজওয়াংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সবাই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।