Image description


ইরান - ইসরায়েল সংঘাতে এবার সরাসরি জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র । প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন । এই অনুমোদনের আগেই ইরান ঘিরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র । অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে , ইরানে যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালাবে কি না , সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প । এই পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল । এদিকে এমন সময়ে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হলো , যখন ইসরায়েলে নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা শুরু করেছে ইরান । এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে । গত বুধবার রাতে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত হয়েছে । গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয় , ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প । তবে এই বিষয়ে

ইরান - ইসরায়েল যুদ্ধের সপ্তম দিন » ইরানে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প । ২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন । » মধ্যপ্রাচ্যের দিকে একের পর এক রণতরি নিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী । বুধবার রাতের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত । চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানাননি তিনি । মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে , ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে না । যদি কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে না আসে , তাহলে মার্কিন হামলা শুরু হতে পারে । সূত্র জানিয়েছে , ইরানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে আগ্রহী ট্রাম্প । এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও । তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগতভাবে সম্মতি দিয়েছেন , তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন । তিনি আশায় ছিলেন ,

ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে । এ নিয়ে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন , “ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না । ’ এদিকে ইরানের হামলার বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলে ট্রাম্প বলেন , ‘ দেখা যাক কী হয় । সবাই আমাকে এটা নিয়ে প্রশ্ন করছে , কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি । '

২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে , যুক্তরাষ্ট্র ইরানে

অভিযান চালাবে কি না , সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প । হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের একটি বিবৃতি পড়ে শোনান । তাতে বলা হয় , ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও সুযোগ দিতে চান । বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন , ‘ ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে , তা আদৌ হবে কি না , তা এখনো নিশ্চিত নয় ; এই প্রেক্ষাপটে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে সেখানে ( ইরানে ) যাওয়া ( অভিযান চালানো ) উচিত হবে কি না । ' মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র । গত বুধবার রাতে বিবিসি জানায় , মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড আগামী সপ্তাহের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হবে । মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক সাময়িকী পলিটিকোয় একাধিক খবর প্রকাশ

নতুন অস্ত্রে আক্রমণ ইরানের

করা হয়েছে । বলা হয়েছে , দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস নিমিতজ রণতরি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে । সোমবার থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে । এ ছাড়া ইউএসএস কার্ল ভিনসন রণতরি ইতিমধ্যে আরব সাগরে রয়েছে । সঙ্গে রয়েছে রণতরি ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান । এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গত সপ্তাহে দুই যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের কাছে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । এ ছাড়া যুদ্ধবিমান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইউরোপের ঘাঁটিগুলোয় । প্রতিরক্ষা বাহিনীর দুটি সূত্র পলিটিকোকে জানিয়েছে , মধ্যপ্রাচ্যে অভিযানের জন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ইরানের শক্তিশালী হামলা : বুধবার রাতে ইরানের তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল । এর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজও ছিল । জবাবে গত বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায় ইরান । দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানায় , বুধবার রাতে প্রথমবারের মতো সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী । এ ছাড়া এই রাতে ইসরায়েলের সরোকা হাসপাতালের পাশে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান । তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ওই হাসপাতালে । এর পর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই । প্রথম ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল , সেখানে ৮০ জনের মতো আহত হয়েছে । পরে সর্বশেষ গতকাল রাতে সিএনএন জানায় , বুধবার রাতে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে , তাতে আহত কমপক্ষে ২৭১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এদিকে ইরানের এই তীব্র হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলও । দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে , ইরান এখন যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে , তাতে একাধিক ওয়ারহেড থাকছে । ফলে একই ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক স্থানে আঘাত হানছে । এই হামলাকে ইরানের সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা । ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এফি দেফরিন বলেন , ইরান এ পর্যন্ত ৪৫০ টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে । ড্রোন ছুড়েছে

হাজারের বেশি । ইরানের বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে । তবে এরপরও ১০০ টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র আছে ইরানের । তিনি বলেন , “ এটা কোনো সাধারণ অভিযান নয় । এটা আমাদের জন্য অনেক জটিল একটি অভিযান । ’ আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : বুধবার রাতের পর আবারও গতকাল হামলা চালিয়েছে ইরান । গতকাল হামলা শুরুর পর হাইফা শহরে সতর্কসংকেত বাজানো হয়েছে । ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে , তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিচ্ছে । ইসরায়েলিদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে । এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস গতকাল জানায় , তেল আবিব ও হাইফা শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে । সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ১০০ ধরনের অস্ত্র ছোড়া হয়েছে । এ ছাড়া এসব শহরের সামরিক স্থাপনার আশপাশে থাকা মানুষদের সরে যেতে বলেছে ইরান । খামেনিকে হত্যার হুমকি ইসরায়েলে হাসপাতালে হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল । ‘ খামেনিকে আর বাঁচতে দেওয়া যায় না ' বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাজ । এ ছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক এক্স বার্তায় ( সাবেক টুইটার ) বলেন , ইরানের টাইরান্ট গতকাল সকালে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে । ওই বার্তায় খামেনিকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও লেখেন , তেহরানের এই টাইরান্টকে এর মূল্য দিতে হবে । এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যে সহযোগিতা করছে , সে জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নেতানিয়াহু । তিনি বলেন , ইতিমধ্যেই ইসরায়েলকে অনেক সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র । ইসরায়েলের আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে এবং দেশটির শহরগুলো রক্ষায় সাহায্য করছে মার্কিন বাহিনী । এদিকে এমন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করেননি খামেনি । তিনি দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন ।