Image description
যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা ‘আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন’

‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে’ (সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)। কবির এই কবিতা যেন দেশের ‘নির্বাচনপাগল’ মানুষের মধ্যে বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে। ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন’ এজেন্ডা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন ইস্যুতে যখন নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা; তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়ে দেন ‘আগামী বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে’। এদিকে ৩০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভার পর ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে নানামুখী ষড়যন্ত্র, বাধা-বিপত্তির মধ্যেও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠার মতোই রমজানের আগে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা পরিষ্কার।

সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সর্বশেষ বৈঠকে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত-এনসিপির সোচ্চার এবং বিএনপি পিআরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এতে হঠাৎ করে নির্বাচনের আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। রাজনৈতিক প-িতদের অনেকেই আশঙ্কা করেন রমজানের আগে নির্বাচন হতে দেয়া হচ্ছে না; ফেব্রুয়ারিতে ভোট না হলে এমনকি আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে কি না সন্দেহ। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টেলিফোন করেন। দুই নেতা দীর্ঘ ১৫ মিনিট কথা বলেন। এ সময় গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা তার রমজানের আগে নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাক্সিক্ষত সংস্কারে সহায়ক হবে’। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভোটের আগে এসে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যক্ষ করার আমন্ত্রণ জানান।

এদিকে একাধিক কুটনৈতিক সূত্র জানায়, আগামীতে নির্বাচিত সরকারের সময় বিনিয়োগে মুখিয়ে রয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। দু’মাস আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনে যারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা নির্বাচিত সরকার এলে বিনিয়োগ করবেন। ওই সূত্রের দাবি চীন এবং ভারত নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে মুখিয়ে রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার কার্যক্রম না এগোনোয় ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা তখন ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সবার ধারণা ছিল বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু সিইসি বৈঠকের পর নীরব হয়ে যান। ফলে প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা থেকে যায় অজানা। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আরো শঙ্কা বাড়তে থাকে। তবে গতকাল সিইসি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনের জন্য ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে’। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টার ‘আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন’ এবং সিইসির নির্বাচন প্রস্তুতি ‘ফুল গিয়ারে’ কথা নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা মানুষ মনে করছে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আকাশে যে কালো মেঘ ওড়াউড়ি করছে তা কেটে যাচ্ছে।

সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম কার্যত আটকে গেছে। গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, ‘সকল প্রস্তুতি নেয়া গেলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে (রমজানের আগে) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’। প্রধান উপদেষ্টা এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। দাতাদেশ, সংস্থার প্রতিনিধিরা ঢাকায় এসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে এবং বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে সকলকেই প্রধান উপদেষ্টা রোজার আগে নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে এবং নিজ দলের গুরুত্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে কোনো কোনো দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক গরম করছে।

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, হাসিনা পালালেও দেশে এখনো আওয়ামী লীগের ৩০ শতাংশের বেশি ভোটার রয়ে গেছেন। ভারতের নীলনকশা হচ্ছে আগামী সংসদে ওই ভোটারদের ভোটে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আর সে জন্য আইন করে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন অপরিহার্য। এতে আওয়ামী লীগ শতকরা ২০ শতাংশ ভোট পেলেই দলটির ৬০টি আসন নিশ্চিত হবে। বুঝে না বুঝে বা পর্দার আড়ালে লেনদেন যেভাবেই হোক অতীতে তেমন জনসমর্থন ছিল না এমন কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে তোলপাড় শুরু করেছে। এ কাজে তারা নিজেদের ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও এবং হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিককে মাঠে নামিয়েছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশের হিন্দু ভোটারগণ নির্বাচনে ভোট বর্জন করবে। এমন অবস্থায় বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা পিআর পদ্ধতিকে সমর্থন করবে না এবং প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে ভোট দিতে হবে। ফলে সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক ঝুলে গেছে।

এর মধ্যে গত ৩০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও টেলিফোনে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। ফোনালাপে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতেও অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে নির্বাচন ইস্যুতে কথা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও ওই ফোনালাপের খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের বরাত দিয়ে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে তাদের অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই ফোনালাপ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী ফোনালাপ ছিল উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও গঠনমূলক, যা দুই দেশের মধ্যকার দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্প্রীতির প্রতিফলন। আলোচনার সময় উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, যার মধ্যে ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা, চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক উত্তরণের রূপরেখা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি এবং আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগকে সমর্থন জানান। ড. ইউনূস জানান, নির্বাচন কমিশন নিরলস পরিশ্রম করছে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে, যা পূর্ববর্তী সরকার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিল। আমাদের তরুণেরা এবার জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সফরের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যক্ষ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।’

ভোটের প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশনে : এদিকে গতকাল নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ এবং আমিও নিরপেক্ষ। এ মুহূর্তে নির্বাচনটা আলোচনার কেন্দ্রে। সৌজন্য সাক্ষাতে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আন্তরিক। নির্বাচনের জন্য ফুল গিয়ারে প্রস্তুতি চলছে। আমাদের প্রস্তুতি এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেই। আমাদের ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের (নির্বাচন কমিশন) যোগাযোগ করতে হয়। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সময় এলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল সময় ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি : নির্বাচন কমিশন যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টাইমফ্রেম নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৩০ জুন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত পুলিশকে জানিয়ে দেয়া হয়। সভায় নির্বাচনের আগে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে অন্তত দু’টি মহড়া দিতে বলা হয়েছে। একটি মহড়া হবে সেপ্টেম্বরে, অন্যটি নির্বাচনের ঠিক আগে। বৈঠকে উপস্থিত একজন উপদেষ্টা পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা হবে, এটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারের যেসব সংস্থা নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের সবার সমন্বয়ে দু’টি মহড়া দিতে হবে, যাতে সহিংসতা কমানো বা এড়ানো যায়। যদি কোনো একটি কেন্দ্রে সহিংসতা শুরু হয়, সেটি মোকাবিলায় যৌথভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, তা ঠিক করতে হবে।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী, আইজিপি বাহারুল আলম, র‌্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য এসব বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।