
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে বাংলাদেশকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন এক সিদ্ধান্ত। রাজ্যের বাংলাদেশ-সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর আদিবাসী, মূলনিবাসী ও উপজাতি অমুসলিমদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি শাসিত আসাম সরকার।
রাজ্যটির মন্ত্রিসভা গত বুধবার এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাশ করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোর অমুসলিম বাসিন্দারা চাইলে লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি পাবেন। এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, "বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুসলিম-অধ্যুষিত জেলাগুলোর আদিবাসী বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
আসামের ৩৫টি জেলার মধ্যে ১১টিতে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু। এর মধ্যে অন্তত ৪টি জেলার সীমানা বাংলাদেশের সঙ্গে মিলেছে। এই জেলার আদিবাসী ও মূলনিবাসীরা বর্তমানে সংখ্যালঘু অবস্থায় রয়েছেন। সরকারের দাবি, এই জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা। ভারতের বিভিন্ন মহল সিদ্ধান্তটিকে "বিপজ্জনক" ও "বিভেদমূলক" আখ্যা দিয়েছে।
আসাম রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব গগৈ বলেন, “বিজেপি সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর আস্থা না রেখে সাধারণ মানুষকে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। এতে আসামে জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম হতে পারে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, “জনগণের হাতে বন্দুক তুলে দিতে কেন আসাম সরকারকে বাধ্য হতে হলো? আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।”
এদিকে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বিরুদ্ধেও উঠেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। চলতি মে মাসের প্রথম ২২ দিনে ভারতের সীমান্ত এলাকা দিয়ে জোরপূর্বক অন্তত ১,১০৬ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তবর্তী এলাকার অন্যতম স্পর্শকাতর অংশ ‘চিকেনস নেক’ (Siliguri Corridor)-এ বাড়ানো হয়েছে নজিরবিহীন সামরিক তৎপরতা। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান ও রাশিয়ান এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অজুহাতে নয়—বরং এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে, যার প্রভাব বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও পড়তে পারে।