Image description

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে। তবে এর আগেই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা। তিন দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি পালন শুরু করবেন তারা। এর ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ফের অনিশ্চয়তায় পড়তে যাচ্ছে। যদিও সরকার দাবি মেনে নিলে তারা কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

সম্প্রতি তিন দফা দাবিতে আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জে আহত শিক্ষকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় ‘পুলিশি হামলায় আহত’ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ ও তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

আগামীকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে এসব দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তিন দফা দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।

শিক্ষক নেতারা জানান, আগামীকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে এসব দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবেন তারা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তিন দফা দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ এ সংক্রান্ত একটি কার্ডও শেয়ার করেছেন।

কার্ডে লেখা হয়েছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দাবি আদায়ে কলম সমর্পণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা আহত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহত শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণসহ মন্ত্রণালয়ের (১০ নভেম্বরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি) ৩ দফা দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো-সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন দেওয়া, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতার স্থায়ী সমাধান ও সহকারী শিক্ষকদের শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের বেতন গ্রেডের দাবির বিষয়টি আগামী রবিবার মন্ত্রণালয়ে যেতে পারে। সেখানে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তা জানার অপেক্ষায় আছেন তারা। সেখানে তাদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ এলে আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন তারা। অন্যথায় কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তারা। সেক্ষেত্রে দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ আমরা সরকারকে কয়েকদিনের আল্টিমেটাম দিতে চাই। এরপরও দাবি মানা না হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচিতে যাব। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে নিহত শিক্ষকের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসাসহ তিন দফা দাবি জানানো হবে।’

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চারটি সংগঠনকে ভূঁইফোর বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তবে এই চারটি সংগঠনের নাম জানাননি তিনি। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ১২টি পিটিআইতে বিপিএড কোর্স চালুকরণ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন গণশিক্ষা উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের ৯টি সংগঠন রয়েছে। তারা মন্ত্রণালয়ে আমাদের সঙ্গে সভা করেছে। আমাদের সাথে আলোচনায় তারা কনভেন্স হয়েছে। তবে ভূঁইফোর চারটি সংগঠন রয়েছে। তারা পুরোপুরি একটি অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছেন। যেখানে প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেড নিয়ে এখনো কাজ চলছে। এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। সেখানে সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের দাবি করা কতটা যৌক্তিক আপনারাই চিন্তা করেন।’

তিনি বলেন, সবকিছুরই একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। যেখানে প্রধান শিক্ষকরা এখনো ১০ম গ্রেড পাননি, সেখানে হুট করে একজনকে ১০ গ্রেড দিয়ে দেওয়া কি সম্ভব? যারা এ আন্দোলন করেছেন, তারা শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়েছেন। তারা শিক্ষকদের ঢাকায় এনে হেনস্তার শিকার করেছেন। শিক্ষকদের কথা ছিল তারা শহিদ মিনারে সমাবেশ করবেন। অথচ শিক্ষকরা ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করল। 

এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আন্দোলনের আয়োজকরা দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, যারা এ শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়ে অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অসুস্থতাজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে। সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়ে মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয়। তার পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।