
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রিকে কম গুরুত্ব দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন তিনি।
এসময় তিনি জাবির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন, ‘সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নতুন একটি ফর্মুলা আমার নজরে এসেছে। এই ফর্মুলার একটি ভালো দিক হলো সেখানে বিভাগ কর্তৃক প্রাথমিক বাছাইয়ের একটি ধাপ এবং সেই ধাপের ১০০ নম্বরের একটি পদ্ধতি তারা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আবার দ্বিতীয় ধাপটি হবে সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই নির্ধারণ।‘
শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি ডিগ্রির কম গুরুত্ব দেবার সমালোচনা করেন বলেন, ‘বিভাগ কর্তৃক প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে আমার দুই সেন্টের বক্তব্য আছে। প্রভাষক নিয়োগে ১০০ নম্বরের বাছাই পদ্ধতিতে এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে নম্বর ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৫,১০, ৪৫ ও ২০! আর ঐদিকে পিএইচডির জন্য ধরা হয়েছে ৫! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জন্য পিএইচডি শুধু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিগ্রী নয় বরং অত্যাবশ্যক একটা ডিগ্রী এবং এই ডিগ্রী অর্জন করতে প্রার্থীকে ন্যূনতম ৩ , অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৪ এবং অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি বছর সময় লাগে। অথচ এই পিএইচডি ডিগ্রীকে এত খাটো করে দেখার কি কারণ বুঝলাম না।‘
তিনি আরো বলেন, ‘পিএইচডি ডিগ্রির সময় প্রকাশনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২টি প্রকাশনা বিবেচনা করে এর জন্য মাত্র ৮ নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কেন? কারো যদি দুটিই থাকে আর অন্য একজনের যদি ৮টি থাকে সেই ক্ষেত্রেও দুই জনেই দুটি আর্টিকেলের জন্য নম্বর পাবে। যার ৮টি আর্টিকেল আছে তার অতিরিক্ত ৬টি আর্টিকেলকে বিবেচনাই করা হবে না। এটি কোন কথা? যার ৮টি আছে তার যদি সবগুলোই হাই ইমপ্যাক্ট জার্নালে থাকে তখন কি হবে? শুধু তাই না দুই জনেরই যদি ২টি করে আর্টিকেল থাকে তার মধ্যে একজনের ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গার্বেজ জার্নালে দুটি প্রকাশনা আর অন্যজনের হাই ইমপ্যাক্ট জার্নালে প্রকাশনা প্লাস যদি অতিরিক্ত আরও একাধিক থাকে তখন কি দুইজনকে তাদের যোগ্যতা অনুসারে নম্বর দেওয়ার কোন সুযোগ রেখেছে? পিএইচডি ও প্রকাশনাকে আরও অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। আসলে এই দেশে ব্যতিক্রমী ভালোদের যোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে অবহেলা করে। আমরা তাদেরকে ধারণই করতে পারিনা। কেন জানি সবাই ভয় পায়।
তিনি আরো বলেন, ‘সমস্যা আরও বেড়েছে যখন দেখলাম সহকারী অধ্যাপকের ক্ষেত্রে পিএইচডির জন্য কোন নম্বরই রাখা হয়নি কারণ এই ডিগ্রীটা আবশ্যক। আরে অনার্স এবং মাস্টার্সওতো আবশ্যক। এই দুটি বা তার আগের গুলোর জন্যতো নম্বর ঠিকই আছে। তাহলে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য নাই কেন? আর পোস্টড-ডকের কথাতো উল্লেখই নাই। অথচ বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদে পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতাকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে দেখে না বরং ন্যূনতম যোগ্যতা হিসাবে দেখে। আর আমরা? আসলে আমাদের নীতি নির্ধারকদের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্মন্ধে ধারণাই নেই। যাদের আছে তারা রাজনীতি দ্বারা অন্ধ ফলে তাদের ধারণা থাকা না থাকা সমান।‘
তিনি প্রশ্ন তোলেন, মেধাবী বাছাইয়ের কোন সৃষ্টিশীল পদ্ধতির লক্ষণ এখানে আছে? সাধারণত প্রার্থীকে চিনে এবং গবেষণা জগতে পরিচিত এমন ৩ জনের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার নেওয়া হয়। সাধারণত টিচিং ও রিসার্চ স্টেটমেন্ট চাওয়া হয় যার মাধ্যমে কি বিষয়ে কিভাবে গবেষণা করবে এবং শিক্ষকতা নিয়ে তার কি স্বপ্ন তা জানা যাবে। কিন্তু জাবির এই প্রক্রিয়ায় এমন কিছুরই বালাই নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।