ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য। তবে সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের অভিযোগ ওঠার পর তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছেন। জনমনে এখন প্রশ্ন উঠছে, শিশির ভট্টাচার্য্য কে এবং কেন এখন সমালোচনার পাত্র?
শিশির ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশি একজন ভাষাবিজ্ঞানী, লেখক ও কলামিস্ট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। তিনি বাংলা ভাষার বিস্তারে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। ভাষাবিজ্ঞানী শিশির ভট্টাচার্য্য ইউরোপ, আমেরিকা আর এশিয়া—এই তিন মহাদেশে ব্যাকরণচর্চার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন প্রায় তিন দশক ধরে।
তার জন্ম জন্ম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায়। প্যারিসের সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতবিদ্যায় এম.এ এবং ভাষাবিজ্ঞানে এমএ এবং এমফিল করেছেন। পিএইচডি করেছেন কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টোকিওর রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি পোস্ট-ডক্টরেট করেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
এ ছাড়া তিনি ফরাসি কবি গিয়ম আপোলিন্যার ও আর্তুর র্যাঁবোর কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং জীবনানন্দ দাশের কবিতা ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর রচিত ব্যার্নার হেনরি লেভির পুস্তক ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিল’ (২০১৪) শিরোনামে বাংলা অনুবাদ করেছেন।
তবে শিশির ভট্টাচার্যের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড তাকে বিতর্কিত করে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষত, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন তার মন্তব্যকে রাষ্ট্রীয় সম্প্রীতি বিনষ্টকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের দাবি, শিশিরের বক্তব্য দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং তিনি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শিশির ভট্টচার্য্যের সাম্প্রদায়িক মনোভাব তাদের গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এখন থেকে শিশিরের অধীনে কোনো ক্লাস বা কোর্সে অংশগ্রহণ করবেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, শিশিরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এর আগে, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সিরিয়ায় দুই যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিশির ভট্টচার্য্য। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আসাদও পালালো?’ প্রশ্ন শুনে এক আরবি বন্ধু বলল, ‘অবাক হচ্ছো কেন, পালানোত সুন্নত (আরব দেশে মহাপুরুষদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত)!’।
এদিকে ঢাবির শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি ওই স্ট্যাটাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। তাদের দাবি, শিশির ভট্টাচার্যের শিক্ষক পদ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।