Image description
সালমান শাহ, ডলি আনোয়ার (উপরে বামে), সোহেল চৌধুরী, মিতা নূর ও সুমাইয়া আসগর রাহা। ছবি: আমাদের সময়

মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এটা সবাই মেনেও নেন। মেনে নেন তখনই যখন সেটা হয় ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু। কিন্তু মানুষের জীবনে এমন অনেক ঘটনা থাকে যা ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে মৃত্যুর সঠিক কারণ থেকে যায় অজানা। রহস্যজনক এসব মৃত্যু শুধুই আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা, নাকি হত্যা সেই রহস্য উন্মোচন করাও সম্ভব হয় না। অনেক তারকা এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। প্রিয় তারকার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারেন না ভক্তরা। আমাদের বিনোদনের এমন কিছু অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে এই প্রতিবেদন।

অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রসঙ্গে শুরুতেই আসে প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর নাম। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ তদন্তযাত্রা, যা প্রায় তিন দশক ধরে অপমৃত্যু মামলা হিসেবেই চলতে থাকে। পরবর্তী সময় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে মত দেয়। তবে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই ওই প্রতিবেদন মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং দাবি করে আসেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর ২৯ বছর পর এবার হত্যা মামলা দায়ের করা হলো। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে নায়ক সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে। ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা করা হয়েছে। সালমানভক্তরা এবার হয়তো নতুন করে জানতে পারবেন তাদের প্রিয় নায়কের খুনের রহস্য।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে ডিবির তদন্তে উঠে আসে, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে সোহেল চৌধুরীকে খুন করা হয়। খুন হওয়ার পরের বছর আশীষ রায় চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর দুই বছর পর (২০০১ সাল) বিচার শুরু হয়। তবে এক আসামি উচ্চ আদালতে গেলে আটকে যায় বিচার কার্যক্রম। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করেন এবং এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন। এরপর খুনের ২৩ বছর পর ২০২২ সালে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সেই মামলার রায় হয় ২৫ বছর পর। ২০২৪ সালের ৯ মে সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আত্মহত্যা করেছিলেন ডলি আনোয়ার। তার মতো উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবংশীয় একজন মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এটা মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। তিনি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষানুরাগী ও সাহিত্যিক ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে। তার পিতা ছিলেন চিকিৎসক। আন্তর্জাতিক চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনকে বিয়ে করার পর থেকে তিনি ডলি আনোয়ার নামে পরিচিতি পান। দেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’তে জয়গুন চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন। এ ছাড়া তাকে দেখা গেছে বেশ কিছু রুচিশীল সমৃদ্ধ গল্প ও চরিত্রপ্রধান ছবিতে। ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে ডলি আনোয়ার আর নেই। বলা হলো তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কারণ হিসেবে উঠে এলো স্বামীর পরকীয়া। প্রায়ই এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো, বিরোধ হতো। তবে তার মৃত্যুকে অনেকেই নীরব খুন বলেও অভিহিত করেন। প্রয়াত নাট্যকার ও শিক্ষাবিদ বেগম মমতাজ হোসেন একটি লেখায় ডলি আনোয়ারের মৃত্যুর জন্য সরাসরি চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনকেই দায়ী করেছেন।

নব্বই দশকে টিভির মিষ্টিমুখ মিতা নূর। বিজ্ঞাপন বা নাটক; সবখানেই নিয়মিতই দেখা মিলত লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর। মিতার সহকর্মীরা বলেন, সব সময় হাসিমুখে থাকতেন তিনি। নিজে হাসতেন এবং অন্যদেরও হাসাতেন। এমন একজন নারীর জীবনে কী এমন ঘটল যে হুট করে তিনি আত্মহত্যা করে বসলেন! সেই রহস্য আর জানা যায়নি। ২০১৩ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসার ড্রয়িংরুম থেকে অভিনেত্রী মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

২০০৭ সালের ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার’ প্রতিযোগিতায় সেরা দশের তারকা ছিলেন সুমাইয়া আসগর রাহা। লাক্স তারকা হিসেবে শোবিজে পথচলা শুরু করলেও ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া অনন্ত জলিলের ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাহা। কিন্তু এখনও এই আত্মহত্যার কোনো কারণ পাওয়া যায়নি।