
বাংলাদেশে বর্ষা ও গ্রীষ্মকাল একযোগে নানা ধরনের সংক্রামক জ্বরের মৌসুম। বিশেষত চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড এবং সাধারণ ভাইরাল জ্বর এ সময় উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অনেকেরই দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতা ও জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ এবং পুনরুদ্ধারে খাদ্য ও পুষ্টি একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে, যা অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলিত থাকে।
চিকুনগুনিয়া জ্বর
চিকুনগুনিয়া একটি আর্বোভাইরাল রোগ, যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় হঠাৎ উচ্চ জ্বর, তীব্র অস্থি ও সন্ধির ব্যথা, র্যাশ ও ক্রনিক ক্লান্তি।
পুষ্টিকর খাবার ও পানীয়
পানি ও ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স: প্রতিদিন অন্তত ২.৫-৩ লিটার তরল গ্রহণ (খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লবণ, চিনি পানি, চিড়ার পানি, মৌসুমি ফ্রেশ ফলের শরবত অবশ্যই বাসায় তৈরি)।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান: আনারস-পেঁপে ব্রোমেলেইন ও প্যাপেইন নামক প্রাকৃতিক এনজাইম প্রদাহ ও হাড় জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে কার্যকর।
রসুন, হলুদ, কালো গোলমরিচ– অ্যালিসিন, কার্কিউমিন ও পাইপেরিন ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন কমাতে সহায়ক।
প্রোটিন ও ইমিউন সাপোর্ট: ডিম, সেদ্ধ মাছ ও মুরগির ঝোল– জ্বরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ, টিস্যু রিপেয়ার করে ও রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি সৃষ্টিতে সহায়ক। ভিটামিন সি (পেয়ারা, আমলকী, লেবু, কাঁচামরিচ, পেপে, কমলা), ভিটামিন ই (বাদাম, সূর্যমুখী তেল), জিংক ও সেলেনিয়াম (ডিম, দুধ, দই, গরুর কিমার মাংস বা কলিজা, ব্রকলি) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপর্ণ।
টাইফয়েড জ্বর
টাইফয়েড একটি এন্টারিক ফিভার, যা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। এর ফলে অন্ত্রে প্রদাহ, জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।
সহজপাচ্য উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার: ভাতের মাড়, সেদ্ধ ওটস, মিষ্টি আলু, সুজি, কলা, চাল, মুগ ডালের নরম-পাতলা খিচুড়ি অন্ত্রের ওপর চাপ না দিয়ে শক্তি জোগায়।
নিম্ন ফাইবার খাদ্য
কাঁচা শাকসবজি, পেঁয়াজ, ছোলা জাতীয় খাবার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে।
হালকা প্রোটিন
ডিমের সাদা অংশ, ঝোল জাতীয় মাছ বা মুরগির স্যুপ সহজে হজম হয় এবং শরীর পুনর্গঠনে দ্রুত সাহায্য করে।
অ্যাডজাস্টেড হাইড্রেশন
ডায়রিয়া বা বমি থাকলে ওর স্যালাইনের মাধ্যমে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
ভাইরাল ফ্লু ও সাধারণ জ্বর
ভাইরাল ফ্লু সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এডেনোভাইরাস বা করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা ও হালকা ডায়রিয়া দেখা যায়।
ইমিউন বুস্টিং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস: ভিটামিন সি (পেয়ারা, লেবু), ভিটামিন এ (পাকা আম, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মধু, কলিজা), জিঙ্ক (ডিম, আমন্ড বাদাম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, কালোজিরা) রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ায়।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: সামুদ্রিক মাছ, চিয়া সিড, আখরোট, কাঠবাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড-ইনফ্ল্যামেশন ও সেল মেমব্রেনের সুস্থতায় স্থিতিশীলতায় খুব প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক ডিটক্স ও হোম রেমেডি: মধু, আদা, কালোজিরা এগুলোর মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে।
লেখক: সিনিয়র ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ, লং লাইফ হাসপাতাল ও বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস ঢাকা