সৈয়দ আবদাল আহমদ
অর্ধশতকেরও বেশি সময় রাজনীতিতে থাকার এক স্বর্ণালি ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী সোমবার তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ছেন। ওভাল অফিস থেকে বিদায়ের আগে জানিয়ে গেছেন, রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও তিনি দৃষ্টির বাইরে বা মনের বাইরে যাচ্ছেন না।
তবে বিদায় বেলায় কিছু উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরেছেন আমেরিকার জনগণের কাছে। তার সে উদ্বেগ হচ্ছে, আমেরিকার জনগণ ও গণতন্ত্র নিয়ে। ১৭ মিনিটের বিদায়ি ভাষণে বাইডেন বলেছেন, আমেরিকায় ‘অলিগার্কি’ (Oligarchy) রূপ নিতে যাচ্ছে। এটাই উদ্বেগের বিষয়।
ইতিমধ্যে বাইডেনের ভাষণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বাইডেনের উপলব্ধিটা আরও আগে হলে ভালো হতো। তিনি দেরি করে ফেলেছেন।
অলিগার্কি বলতে বাইডেন কী বোঝাতে চেয়েছেন? তার মতে, আমেরিকার চরম সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাব একটি ধনীগোষ্ঠীর হাতে চলে যাচ্ছে, যা দেশটির গণতন্ত্রের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেটাই বাইডেনের ভাষায় ‘অলিগার্কি রূপ’ নিতে যাচ্ছে।
তিনি এ-ও বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নাগরিকদের ভুল ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া শুরু করেছে। এর ফলে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি এক শতাব্দী আগে আমেরিকানরা যে ডাকাত ব্যারনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তা স্মরণ করিয়ে দেন।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও প্রযুক্তি মোগলরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এসে দাঁড়িয়েছেন। স্পেস এক্স ও টেসলার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি ইলন মাস্ক নির্বাচনে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের হয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন। এবার ট্রাম্পকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন ফেসবুক, তথা মেটার মার্ক জাকারবার্গ, আমাজনের জেফ বেজোস।
তারা প্রত্যেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে অনুদান দিচ্ছেন ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ তহবিলে। ইলন মাস্ক ও ব্যবসায়ী বিবেক রামাস্বামীকে সরকারি পদে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের দুই কট্টর সমর্থক ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির প্রধান হবেন। ইতিমধ্যে জাকারবার্গ সুর বদলে ফেলেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে আগের বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছেন। আগে তিনি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। এবার ট্রাম্প জাকারবার্গের কাছ থেকে সুদে আসলে সুযোগ পাবেন।
বাইডেন তার বিদায়ি ভাষণে সেদিকেই ইঙ্গিত করে আমেরিকান অলিগার্কদের নিয়ে সতর্কবার্তা দেন। অভিযোগ করেন, গুটিকয়েক ধনীব্যক্তির হাতে বিপজ্জনকভাবে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে ক্ষমতা। আমেরিকার অতি ধনীদের একটি ধনীগোষ্ঠীতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্র (অলিগার্কি) এবং প্রযুক্তিশিল্প কমপ্লেক্স কায়েম হতে যাচ্ছে, যা তিনি সতর্ক করছেন। বাইডেনের ভাষায়, এটা আমেরিকার পুরো গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলবে। এর উত্থান সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলেছেন বাইডেন।
অবশ্য বাইডেন তার মেয়াদে ১৭ মিলিয়ন লোককে চাকরি দেওয়া, গাজায় যুদ্ধবিরতি আনা, ফ্রার্স্ট মেজর গান সেফটি আইন করা, মহামারি মোকাবিলা ও অর্থনীতি মজবুত করার সাফল্যের কথাও শোনান আমেরিকার জনগণকে। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে সিনেটর হিসেবে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেছিলেন বাইডেন।