Image description

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জুন। এ কমিটিতে প্রায় সাড়ে তিন বছর পার হলেও এখনো হয়নি নতুন কমিটি। ফলে পুরাতন কমিটিতেই চলছে ছাত্রদলের কার্যক্রম। কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদলের নেতৃত্বে জট তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রদলের এ আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন। যার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৯ বছর আগেই। আর সদস্য সচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী

মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তারও ছাত্রত্ব শেষ ৭ বছর আগে। কমিটির কয়েকজন সন্ধ্যাকালীন কোর্সে ভর্তি থাকলেও শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার নেই ছাত্রত্ব। এ ছাড়া কলেজ শিক্ষক, ব্যবসায়ী, অনিয়মিত ছাত্র, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন এবং আওয়ামী লীগপন্থিদের কমিটিতে রেখে নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এ কমিটি।

অভিযোগ রয়েছে, কুবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৩ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তবে গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পাসে সক্রিয় তিনি। ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিষ্ক্রিয় ছিলাম এটা আপনাকে কে বলেছে? আমি কি আপনাকে দেখিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করব? একটি কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সভাপতি, সেক্রেটারি যেকোনো একজন থাকলেই হয়। আমার অনুপস্থিতিতে অন্যরা তো কাজ করেছে। সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি মানেই আমার ছাত্রত্ব রয়েছে। আমাদের যখন কমিটি হয় তখন আমার বয়স ছিল।’

একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদ উল্ল্যাহ অহিদের ছাত্রত্ব নেই এবং তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করছেন। গিয়াসউদ্দিন আশিক আইকন কোচিং সেন্টারের পরিচালক এবং গোলাম রাব্বানী আশিক কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক। এমদাদুল হক সাকিব আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান এবং তার মা আওয়ামী লীগ থেকে মহিলা মেম্বার নির্বাচিত হন। সায়মন সরকার ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। আতিকুর রহমান ও ইউসুফ মিয়ার ছাত্রত্ব নেই। ক্যাম্পাসে আদু ভাই বলে সমালোচিত ছাত্রদলের এই কমিটির নেতারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ‘আমাদের কমিটিতে অবশ্যই তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে ১৭ বছর বঞ্চিত থাকার কারণে আমাদের নেতৃত্ব সংকট রয়েছে। তাই তরুণরা কমিটি চালাতে পারবে কি না, এ ব্যাপারে আমরা সন্দিহান। আমাদের কোনো নেতা যদি ব্যবসায়ী, বয়স্ক, শিক্ষক, ছাত্রলীগ থেকে থাকে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে গত ৬ অক্টোবর ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধসহ ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে কুবির প্রক্টরিয়াল টিম। কিন্তু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গত ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কুবি ছাত্রদল সংগঠনের ব্যানারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ক্যাম্পাসে এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া টুর্নামেন্ট পরিচালনা, বৃক্ষরোপণ ও খিচুড়ি ভোজের আয়োজন করে ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

ক্যাম্পাসে রাজনীতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জান্নাতুল ইভা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নির্দিষ্ট দলের রাজনীতি চর্চার জায়গা নয়। এখানে রাজনীতি হবে, তবে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থাকবে না। এখানে থাকবে ছাত্রসংসদ। কুবিতে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটা ঠিকঠাক কার্যকর হয়েছে বলে আমার মনে হয় না! কারণ আমরা দেখেছি এক দল শহীদ মিনারে ফুল দেয় আরেক দল গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য স্মারকলিপি দেয়। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাটা যদি সর্বোচ্চ কার্যকর হতো, এখানে তারা কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করত না।’