Image description

রাজধানীতে জিহাদ হোসেন নামে জুলাই আন্দোলনের এক শহীদকে নিয়ে মামলা করে বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াসী উদ্দিন আলোর বিরুদ্ধে। শহীদ জিহাদের পরিবারের দাবি, টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মামলা করতে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতা। চেষ্টায় সফল না হয়ে পরে নিজেই বাদী হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আদালতে হত্যা মামলা করেন তিনি। তবে ওয়াসী উদ্দিন আলোর দাবি, তিনি রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মামলা করেছেন।

যাত্রাবাড়ী মোড়ে গত ৫ আগস্ট দুপুরে নিজের মোবাইলে চিত্র ধারণ করেন জিহাদ হোসেন। পরে একই স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মোবাইলে মেলে বর্বরতার চিত্র।

 
ছোট ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা জিহাদের পরিবার। অনেকে মামলা করার পরামর্শ দিলেও মামলা করেননি তারা। কিন্তু জিহাদ হত্যাকে পুঁজি করে তার বাবা মাকে দিয়ে মামলা করাতে উঠেপড়ে লাগেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ওয়াসী উদ্দিন আলো। মামলা করাতে তাদের রাজি করতে না পেরে এক পর্যায়ে গেলো ডিসেম্বরে নিজেই বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন ওয়াসী উদ্দিন। মামলার নথিতে দেখা যায়, ২১৭ জনসহ অজ্ঞাত আরো ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করেছেন ওয়াসী উদ্দিন।
 
জিহাদের বাবা মো. মোসারফ হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে সময় সংবাদকে বলেন, 

 

এই শহীদের বাবা হলাম আমি। অন্যরা কীভাবে মামলা দেয়, সেটা তো আমার মাথায় আসে না! দুই থেকে আড়াইশো লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা আমার বাসায় এসে হয়রানি করছেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, ‘আপনি কেন মামলা দিলেন? আপনার কী ক্ষতি করেছি?’ তাদের বলি, আমি তো কারও নামে মামলা দিইনি। 

 

 
মো. মোসারফ হোসেন বলেন, ‘৫ থেকে ৬ জন লোক এসে আমাকে ৫০ হাজার টাকার বান্ডেল দেয়। তারা বলেন, মামলা করলে যাবতীয় খরচ তারা দেবেন। পরে তারা নির্দোষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেন।’
 
জিহাদের মা পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীদের যেন কঠিন বিচার হয়। তবে নিরাপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন।’
 
মামলায় অভিযুক্ত মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘বাড়িঘর দখল করার জন্য আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। পরিবারের সবাইকেই মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
 
আর আলেয়া আবেদীন বলেন, ‘জিহাদের মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আরেকজনকে বাদী বানিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
 
 
জানা যায়, ওয়াসী উদ্দিন আলো রাজধানীর ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ওয়াসী উদ্দিন।
 
সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে মামলা করানোটা কি অপরাধা হয়ে গেছে? তদন্তে কেউ দোষী না হলে, তাকে বাদ দিয়ে দেবে!’
 
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক আহমেদ বলছেন, নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে সতর্ক আছেন তারা।
 
অন্যদিকে ভিকটিমের পরিবারকে না জানিয়ে ফৌজদারি মামলা দায়েরের অভিযোগে উল্টো ওয়াসী উদ্দিনের বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিত বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
 
 
তিনি বলেন, 

 

ফৌজদারি মামলায় একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, ভুক্তভোগী বা ভুক্তভোগীর পরিবারের কেউ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া অন্য কেউ এ মামলা করতে পারবেন না। এখন যে মামলা করা হয়েছে, এর পেছনে ওই ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্য আছে। ভুয়া মামলা করার কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে মামলা হওয়ার সুযোগ আছে। জিহাদ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে জিহাদের পরিবার কিংবা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে পারে।