সংসদ ভবনের পেছনে স্বামী জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই আর কিছু সময় পর সমাহিত হবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দাফনের আগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এটি যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। ৪৪ বছর আগে এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতেই লাখো মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। আজ জানাবেন বেগম খালেদা জিয়াকে। আজও লাখো মানুষের ঢল নেমেছে একই অঙ্গনে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তার ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। খালেদা জিয়া তখন দেশের ফার্স্টলেডি। চট্টগ্রাম বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিষ্পত্তিতে সেখানে গিয়েছিলেন জিয়া। সার্কিট হাউজে দিনভর বৈঠকের পর শেষ রাতে সেনা অভিযানে তার মৃত্যু হয়।
ওই বছরের ২ জুন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে সংসদ ভবনের উত্তর পার্শ্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। শেষযাত্রায় ঐতিহাসিক জনসমাগম হয়েছিল। ঢাকার সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানাজায় অংশ নিয়েছিল।
৪৪ বছর পর খালেদা জিয়ার জানাজাও একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিহাসের মিল দেখা যাচ্ছে। জিয়া নিহত হওয়ার সময় খালেদা জিয়া ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। দুই ছেলে তারেক ও আরাফাত রহমানকে নিয়েই ছিল তার জীবন। জিয়া পরিবারকে জনসম্মুখে আনতেন না।
স্বামীর মৃত্যুই তাকে রাজনীতিতে টেনে আনে। কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিএনপির দায়িত্ব নেন তিনি। রাজপথের সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলেন। দলকে নির্বাচনে জিতিয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান হিসাবে ইতিহাসে স্থান পান। তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি যেন!
১৯৮১ সালের ঢাকার সাথে বর্তমান ঢাকার তুলনা চলে না। তখন ঢাকার জনসংখ্যা এখনকার মতো ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রপতির জানাজায় লাখো মানুষের সমাবেশ হয়েছিল। সাধারণ মানুষের সেই অংশগ্রহণ জিয়ার জানাজাকে ইতিহাসে বিশেষ স্থান দিয়েছে।
খালেদা জিয়া স্বামীর রাজনৈতিক ধারাকে ধারণ করেই রাজনীতি করেছেন। নিজ মেধা ও প্রজ্ঞায় বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। মৃত্যুর পর আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে তিনি জিয়াউর রহমানের পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেরই অংশ হবেন।
শীর্ষনিউজ