নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসন বিএনপি তাদের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মনির হোসাইন কাশেমীকে ছেড়ে দিয়েছে। বিএনপির কেউ এ আসনে প্রার্থী হবেন না বলা হলেও তা মানছেন না দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা। এ আসনে ইতোমধ্যে বিএনপির তিন নেতা মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে তাঁর সমর্থক নেতাকর্মীরা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন ফরম তুলেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি শাহ আলম। এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ আলীও এ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফরম কেনার সময় ছিলেন ফতুল্লা থানার সহসভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা, সহসভাপতি আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, সহভাপতি লোকমান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, ফতুল্লা ইউনিয়নের সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশসহ ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ আসন থেকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলীর পক্ষে বুধবার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাঁর সমর্থক নেতাকর্মীরা। এ আসনের জন্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের ১৮ জন মনোনয়ন কিনেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে হেভিওয়েটদের মধ্যে প্রথম ১৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন বিএনপি নেতা শিল্পপতি শাহ্ আলম। এ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা চাইলে, জনগণ চাইলে আমি ইনশাআল্লাহ এ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক আশায় ছিল এ আসনে তারা ধানের শীষ পাবে। বহু বছর পর ভোট দিতে পারার সুযোগটা তারা কাজে লাগাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে– এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী সামান্য ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী শাহ্ আলমকে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে কবরী এক লাখ ৪১ হাজার ৭৫ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, শাহ্ আলম পেয়েছিলেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৬ ভোট।
এ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নবঞ্চিত নেতা এফবিসিসিআইর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ আলীও স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানান। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির হয়ে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। তিনি বলেন, এ আসনে বিএনপি নেতাকর্মীসহ মানুষের আশা ভঙ্গ হয়েছে। ফতুল্লা বিএনপির এলাকা। সব সময় এ আসনে বিএনপি প্রার্থী ভালো করেছে। সবাই চেয়েছিল এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী থাকবে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। যাকে দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তাই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনুরোধে আমি মনোনয়নপত্র কিনেছি। ইনশাআল্লাহ আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন করব।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার মনোনয়নপত্র আমি কিনিনি। নেতাকর্মীরা কিনে এনেছে। তারা চাচ্ছে আমি নির্বাচন করি। কারণ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তারা জোট মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছে না। তাদের মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাকে নির্বাচন করতে হবে।’
এ আসনে ২০০১ সালে মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গিয়াস উদ্দিন পেয়েছিলেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৩২৩ ভোট। অন্যদিকে, শামীম ওসমান পেয়েছিলেন এক লাখ ছয় হাজার ১০৪ ভোট।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী গতকাল শুক্রবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জোটের মনোনয়ন পাওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র নির্বাচন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাধীন দেশ। নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানুষের অধিকার। মনোনয়নবঞ্চিতরাও যাতে নির্বাচন করতে পারে, এ জন্যই তো স্বতন্ত্র অপশন রাখা হয়েছে। আমার প্রতি বিএনপির দলীয় ও জনগণের সমর্থন রয়েছে। জনগণ জানে বিগত নির্বাচনে আমার বিজয় কীভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
ফরম নিয়েছেন মাসুদুজ্জামান
নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মাসুদুজ্জামানের পক্ষে তাঁর নেতাকর্মীরা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাসুদুজ্জামানের পক্ষে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর সেন্টু, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক সহসভাপতি হাজী নুরুদ্দিন, মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাজী ফারুক হোসেন মাসুদুজ্জামানের পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
মাসুদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নিরাপত্তা ও পারিবারিক কারণে নির্বাচন থেকে সরে গেলেও পরে আবার নেতাকর্মীদের চাপে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে এর মধ্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন এবং পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপি এখনও বিষয়টি পরিষ্কার করেনি।
সব আসনেই একাধিক প্রার্থী
শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনেই নয়, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) ছাড়া বাকি সবগুলোতেই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। এখানে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর সহসভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিমেরও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফরও প্রার্থী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান আঙ্গুর এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহঅর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।