Image description

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিরাজগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারে গতি এসেছে। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাটবাজার ও চায়ের দোকানে নির্বাচনের আলোচনা তুঙ্গে। সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে। তবে একটি আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন ভোটাররা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

 

সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর-সদর আংশিক)

যমুনা নদীবেষ্টিত আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। তবে আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে নেই। এখানে দ্বিতীয় দল হিসেবে শক্ত অবস্থান বিএনপির। প্রার্থী হিসেবে কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজার নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। তিনি এ আসনে বেশ জনপ্রিয়। অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী দলের জেলা আমির মাওলানা শাহীনুর আলম। উভয় প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ আবু জাফর, নাগরিক ঐক্য মনোনীত প্রার্থী সাকিব আনোয়ার নির্বাচনি প্রচারে রয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ)

আসনটি এক সময় বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দখলে ছিল আওয়ামী লীগের। এবার এ আসনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং জামায়াতের প্রার্থী জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মুহিবুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের মাহফুজ রহমান প্রার্থী হিসেবে কাজ করছেন। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। বসে নেই দলীয় কর্মীরাও। তারাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। ফলে এখন সর্বত্র নির্বাচনি আলোচনা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে নির্বাচনি গণসংযোগ।

সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ)

উত্তরাঞ্চলের খাদ্যশস্য ভান্ডারখ্যাত এ আসন আসলে বিএনপির দুর্গ। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসন থেকে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার। তার মৃত্যুতে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি আইনুল হক। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াতের প্রার্থী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা গাজী আইনুল হক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী দিলশানা পারুল। জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা অনেক আগেই মাঠে নেমেছেন। ছুটে চলছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটাররা মনে করছেন, বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। শুরুর দিকে মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য দলের একটি অংশ মিছিল-সমাবেশ করলেও এখন সবাই ভিপি আইনুল হককে সমর্থন জানাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া)

এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দুবারের সংসদ সদস্য আকবর আলী এবং জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এখানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনে মিছিল-মিটিং ও সমাবেশ-মানববন্ধন হলেও প্রার্থী পাল্টানো হয়নি। এ আসন থেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই দলই মুখোমুখি অবস্থানে। দুই প্রার্থীই নির্বাচনি এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি আব্দুর রহমান ও এনসিপির প্রার্থী দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী (প্রীতি) এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এখানকার ভোটাররা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রত্যাশা করছেন।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী)

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের এনসিপি থেকে মনোনয়ন নেওয়ায় এ আসনে ভোটের হিসাব পাল্টে গেছে। সৎ সংসদ সদস্য হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। চৌহালীতে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করায় সবার ধারণা ছিল মেজর মঞ্জুর কাদের বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে এনসিপির টিকিট নিয়েছেন তিনি। এছাড়া বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলের রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম ও জামায়াতের প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আলী আলম। এ তিন প্রার্থীকে নিয়ে এখানে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মোহাম্মদ নুরুন্নবী এ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর)

আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনের হিসাব বাদ দিলে আসনটি বরাবরই বিএনপির দখলেই ছিল। ১৯৯১ সাল থেকে এটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটি বিএনপি পুনরুদ্ধার করবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রার্থী শাহজাদপুর উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা এমএ মুহিত। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (জাতীয় পার্টি) এমএ মতিনের ছেলে। এখানে বিএনপিতে বিরোধ থাকলেও প্রার্থী ঘোষণার পর সবাই একাট্টা। এছাড়া জামায়াতের প্রার্থী উপজেলা আমির মিজানুর রহমান, এনসিপির এসএম সাইফ মোস্তাফিজ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেজবাহ উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জামায়াতের প্রার্থী মিজানুর রহমানও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। আবার এনসিপির প্রার্থী সাইফ মোস্তাফিজ অনেক আগেই থেকে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই ইসলামী আন্দোলনের মেজবাহউদ্দিনও। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে।

 

এ জেলার সার্বিক নির্বাচনি পরিস্থিতি নিয়ে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, সিরাজগঞ্জ হচ্ছে বিএনপি দুর্গ। এবার কিছু আসনে মনোনয়ন নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাই দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছি। সবাই দলের জন্য কাজ করব, যাতে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হতে পারেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রার্থী মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য হচ্ছে দল ও ধানের শীষ। আমরা তার নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। আশা করছি সবাই মিলে কাজ করলে সিরাজগঞ্জের প্রতিটি আসনে বিএনপি জয়লাভ করবে।

অন্যদিকে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। আমাদের নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে এক বছর আগে। এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে আমাদের প্রার্থীরা যাননি। ভোটারদের মাঝে জামায়াতের প্রার্থীদের নিয়ে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। এবার ভোটাররা পরিবর্তন চান। আশা করি আমাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের এনসিপির প্রার্থী মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের বলেছেন, দেশের মানুষ আর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের ভোট দেবে না। ভোটাররা পরিবর্তন চায়। তাদের তাগিদে আমি প্রার্থী হয়েছি। আশা করি এলাকার উন্নয়নে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী মাহফুজ রহমান বলেন, নতুনদের ছাড়া সামনের দিকে এগোনো সম্ভব নয়। আমরা ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি ভেঙে দেব। অতীতে যত ভুল হয়েছে, সেগুলো থেকে বের হয়ে নতুনভাবে নতুন ধারার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে গণঅধিকার পরিষদ। আশা করি ভোটাররা আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।