২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বগুড়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সাবেক নেতা, যারা নিজ দলের কর্মী বা সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তারা এখন আবার দলে ফেরার জন্য জোরালো তৎপরতা শুরু করেছেন। একই সঙ্গে এতদিন আত্মগোপনে থাকা দাগি সন্ত্রাসীরাও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আসামিরা জামিনে বের হয়ে পুনরায় স্বপদ ফিরে পেতে চাইছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিপুল সরকার। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর গোকুল এলাকায় সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি মিজানুর রহমান ও যুবদল কর্মী সানোয়ার হোসেন লেদোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার প্রধান আসামি। বহিষ্কৃত এই নেতা ও তাঁর অনুসারীরা বর্তমানে দলে ফেরার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে তারা কেন্দ্র ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
দলে ভেড়ার চেষ্টায় আছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জিতু ইসলামও। কিশোরীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে বাবা এক রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যার আসামি তিনি। জামিনে বের হয়ে তিনিও এখন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ফিরে পেতে মরিয়া।
সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা এলাকার আব্দুল হান্নান বাটালু নিজ দলের নেতা রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় হান্নানসহ ২০ জনের নামে সোনাতলা থানায় মামলা করেন রাশেদের মা ওজেনা বেগম। জামিনে বের হয়েই তিনি বাহিনীসহ পুনরায় দলীয় কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ধরনা দিয়েছেন বগুড়া-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামের কাছেও।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় বিএনপি নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “নির্বাচনী কাজে কোনো খুনির প্রয়োজন নেই। জনগণ ধানের শীষকে ভালোবেসে ভোট দেবে, সন্ত্রাসীদের পেশিশক্তি দিয়ে নয়।”
তথ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দাপট দেখানো অনেক ক্যাডার ও সন্ত্রাসী গ্রুপ এখন খোলস পাল্টানোর চেষ্টা করছে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ভিপি সাজেদুর রহমান শাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শানের পালিত অনেক ক্যাডার এখন বিএনপিতে আশ্রয় খুঁজছে। বিশেষ করে সেউজগাড়ির সামিউল-মুন্না বাহিনী এবং প্রতিপক্ষ ‘কোবরা’ গ্রুপের মতো সশস্ত্র বাহিনীগুলো এখন বিএনপি নেতাদের নজরে আসার চেষ্টা করছে, যাতে নির্বাচনের সময় নিজেদের পেশিশক্তি প্রদর্শন করে ফের রাজপথ দখল করতে পারে। জেলায় এমন অন্তত ২০০ সন্ত্রাসী রয়েছে।
খুনি ও সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়ানো প্রসঙ্গে বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, খুনিদের দলে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। তাদের আশ্রয় দিলে দলেরই ক্ষতি হবে।
জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শত চেষ্টা করলেও কোনো খুনি বা সন্ত্রাসীর জায়গা বিএনপিতে হবে না। বিএনপি জনগণের দল এবং তারা জনগণের রায় নিয়েই জয়ী হতে চায়।
সচেতন মহলের মতে, নির্বাচনের আগে এসব চিহ্নিত অপরাধী দলে ভিড়লে জেলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। তাই তৃণমূল পর্যায়ে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএনপির হাইকমান্ডকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে প্রশাসনকেও তৎপর থাকতে হবে মনে করছেন তারা।