গত কয়েকদিনের ঘটনায় দেশের মানুষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'বর্তমানে মানুষ নতুন করে ভাবছেন যে, নির্বাচন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি?'
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত চীন-মৈত্রী সম্মেলনে দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত 'স্টার নির্বাচনী সংলাপ' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ১৫ বছরের সংগ্রাম, রক্তপাত, ত্যাগ, নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সবশেষে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ বছরে দেশে এমন এক অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল যে, মানুষ মনে করত নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে পারলেই যেন তারা বেঁচে যায়। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, দুর্ভাগ্যক্রমে সেই সুযোগটাও যেন এখন আমরা হারাতে বসেছি।'
বিএনপি মহাসচিব আক্ষেপ করে বলেন, 'আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যখনই আমরা কোনো ভালো একটা সুযোগ পাই, তখনই কিছু মহল কিংবা কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সেই সুযোগকে বিনষ্ট করে দেয়। আমরা সেই সমস্ত নেতিবাচক সম্ভাবনাকে দূর করে সত্যিকার অর্থেই আশা নিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।'
বিএনপি প্রথম থেকেই নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের কথা বলায় আমাদের অনেকেই খোঁটা দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন—বিএনপি শুধু নির্বাচনে যেতে চায়, ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এখন এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণে অনেক ঘটনা তৈরি হয়েছে এবং নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার মতো অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে।'
নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করে ফখরুল বলেন, 'বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমরা সব সময় নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। রাষ্ট্র পরিচালনার অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে, আর সেই কারণেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করেছি। এত নির্যাতনের মুখেও আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হইনি।'
দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা অর্থনীতির জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পেপার তৈরি করেছি, যা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই পরিকল্পনাগুলো বর্তমান সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে। আমি জানি, এটা এক-দুই দিনে সম্ভব নয়, তবে আগামী পাঁচ বছরে আমরা পর্যায়ক্রমে সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারব।'
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, '২০১৬ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া "ভিশন-২০৩০" নামে একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। বর্তমানে সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে যেসব বিষয় উঠে আসছে, তার অনেক কিছুই ওই ভিশন-২০৩০-এ অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা অনেক আগেই উপলব্ধি করেছিলাম যে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা ওই প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম।'