Image description

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদের সঙ্গে একাধিক পেশাদার শুটারের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও তার যোগাযোগ থাকার ধারণা করছে তারা। তবে ধূর্ত হওয়ায় তিনি একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন।

ডিবি জানায়, পুরান ঢাকার আদালতপাড়া ও মিরপুরে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারদের সঙ্গেও ফয়সালের যোগাযোগ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করা গেলে তার সঙ্গে যুক্ত শুটারদের পরিচয় ও হামলার নেপথ্যের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

ডিবি আরো জানায়, হাদির ওপর হামলার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে ওই ভুয়া নম্বর প্লেট একটি ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়। হামলায় ব্যবহৃত হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল, একটি হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকা থেকে গত রোববার পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। সিটিটিসির একটি দল সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শেরেবাংলা নগর থানার পশ্চিম আগারগাঁও বনলতা আবাসিক এলাকার একটি ভবনের নিচতলার পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল ও হেলমেট উদ্ধার করা হয়। পরে ম্যানহোলের ভেতর থেকে ভুয়া নম্বর প্লেটটি উদ্ধার করা হয়।

মোটরসাইকেলটির মালিকানা যাচাইয়ে জানা যায়, প্রথমে এটি আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির মালিকানায় ছিল। পরে শহিদুল, রাসেল, মার্কেটপ্লেস, ওবায়দুল ইসলাম, আনারুল এবং আবার ওবায়দুলের হাত ঘুরে শুভ নামে একজন এটি কেনেন। আটবার হাতবদলের পর হামলার ঘটনায় জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মাইনুদ্দিন ইসলামের নামে মোটরসাইকেলটি কেনা হয়। ডিবি জানিয়েছে, ফয়সাল ও তার সহযোগী আলমগীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাদের আটক করা গেলে গুলির ঘটনার পূর্ণ রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, হাদির ঘটনায় আপাতত নতুন কোনো আপডেট নেই। এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরীরকে ফোন করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এদিকে র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, বুধবার কেরানীগঞ্জের একটি বাসা থেকে ফয়সালের বাবা-মাকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ফয়সালের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি। তবে তারা স্বীকার করেছেন, ফয়সালের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতা নানকের যোগাযোগ ছিল।

ডিবি আরো জানায়, ওসমান হাদিকে গুলি করতে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ফয়সালের অবৈধ অস্ত্র বহনে কারা সহযোগিতা করত, তাও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ফয়সালের বন্ধু ও সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার মূল অভিযুক্ত ফয়সালকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে মাইক্রোবাস ভাড়া দেওয়া নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বলকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এ আদেশ দেয়। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।

গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে একই মামলায় ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপুকে গ্রেপ্তার করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানের তিন দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত ও প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর এ হামলা চালানো হয়।

এজাহারে আরো বলা হয়, আওয়ামী লীগের পলাতক কেন্দ্রীয় নেতাসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর থেকে প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনা, নির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা ও গানপাউডার দিয়ে আগুন সন্ত্রাস, দেশি ও বিদেশি অস্ত্র-গোলাবারুদের জোগানদান, অনলাইনে গুজব রটনা ও ভীতি প্রদর্শন করছে। এর মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা, জনমনে আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি করা, সর্বোপরি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বাধা প্রদান এবং আগ্রহী প্রার্থীদের মনোবলে আঘাত হানার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

শরীফ ওসমান হাদি গত শুক্রবার মতিঝিলে জুমার নামাজ শেষে নির্বাচনি প্রচার শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানার বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলযোগে আসা দুষ্কৃতকারীরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে অস্ত্রোপচারের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।