ফেসবুকে এক পুলিশ কর্মকর্তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে সিনিয়র ওই কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে বসে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, “জানি আমার চাকরি চলে যাবে তবুও বলি, নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের এক বিষ। একদল ১৭ বছর খেয়েছে আরেকদল নাকি ২০ বছর খাবে।”
এটুকু বলেই তিনি থামেন নি। ‘জনতার পক্ষ হয়ে’ তিনি আরও বলেছেন, “আর আমরা কি চুপ করে থাকবো? তিন বাহিনী মিলে প্রতিটা চান্দাবাজা, টেম্পবুাজকে উত্তম আপ্যায়ন করে দেব। জনতা সাথে থাকলে আমরা কাউকে গুনি না”
একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন ‘সাহসী’ ও ‘জনবান্ধব’ কথা শুনে যারপরনাই মুগ্ধ সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। শয়ে শয়ে মানুষ কমেন্ট করেছেন তার এই সঠিক অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে। কেউ সাহস যুগিয়েছেন এমন ‘ভালো মানসিকতা’র একজন পুলিশ কর্তার সন্ধান পেয়ে।
ভিডিওর নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, “স্যার আপনার সুন্দর কথার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। স্যার আপনাদের ডিপার্টমেন্টের থেকে এমন একটি জিনিস বের করেন যার জন্য আমরা সকলেই একমত হই আমরা এমন সরকার চাই না। প্লিজ স্যার কিছু করেন।”
আরেকজন লিখেছেন, “চাকরি কেন চলে যাবে এতদিনে আপনাদের সুবুদ্ধি হয়েছে ইনশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।”
পুলিশ কর্মকর্তাটির জন্য দোয়াও করেছেন কেউ কেউ। একজনের দোয়া ছিল এরকম: “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার! আপনার মত এরকম দুই একজন সরকারি কর্মী প্রয়োজন আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক ধন্যবাদ স্যার।”
অবশ্য সবাই যে পুলিশ সদস্যের কথায় মুগ্ধ তা কিন্তু নয়। কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী তার কথাবার্তাকে সন্দেহের চোখেও দেখেছেন।
সন্দেহবাদী একজনের মন্তব্য, “আপনি এর আগে কী করেছিলেন তার তদন্ত করা দরকার। আপনি সঠিকই বলেছেন তবে আপনি এর আগে কেমন ছিলেন আপনার বিষয়টিও তদন্ত করা দরকার। আপনি এত ভাল কিভাবে হলেন?”
গত ২২ নভেম্বর পোস্ট করা ভিডিওটি ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ এই রিপোর্ট প্রকাশ করার দিন পর্যন্ত দেখেছেন প্রায় ১২ লাখ মানুষ। লাইক করেছেন প্রায় ৩২ হাজারের বেশিজন এবং শেয়ার করেছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ।
তবে ফেসবুকে এত তোলপাড় তোলা পুলিশ কর্মকর্তাটি বাংলাদেশ পুলিশের কেউ নন। এমনকি তিনি কোন মানুষই নন! নামহীন এই কর্মকর্তাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে সৃষ্ট একটি চরিত্র। যদিও অসংখ্য মানুষ এআই চরিত্রটিকে ‘সত্যিকারের রক্ত-মাংসের মানুষ’ ভেবেই কমেন্ট করেছেন এবং শেয়ার করেছেন।
এভাবে এআই-সৃষ্ট চরিত্র তৈরি করে রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন চলছে বেশ জোরেশোরে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এসব এআই চরিত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্যও ছড়ানো হয়।
এআই চরিত্রগুলো দিন দিন নিখুঁত হয়ে ওঠায় সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই ধরনের ভিডিওগুলো শনাক্ত করতে পারেন না। ফলে এসব চরিত্রকে ‘সত্যিকারের মানুষ’ মনে করে বিভ্রান্ত হোন। আবার অনেক সময় তাদের ছড়ানো অসত্য তথ্যেও বিশ্বাস করেন।
বিএনপি-জামায়াতের বয়ানের লড়াই
উপরে যে এআই-সৃষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে সেটিতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নেয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে এই দুই দলকে নিয়ে একটি বয়ান আছে যে তারা উভয়েই একটি অন্যটির মতো ‘খারাপ’ দল। এই বয়ানটি এআই পুলিশ চরিত্র দিয়ে ভাষা দেয়া হয়েছে এভাবে, “নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের এক বিষ”।
আবার সরাসরি বলা হয়েছে, “একদল ১৭ বছর খেয়েছে আরেকদল নাকি ২০ বছর খাবে”। এই বাক্যটির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন এবং এর মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাব্যতাকে নেতিবাকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
পরোক্ষভাবেও এআই পুলিশ চরিত্রটি বিএনপির বিরুদ্ধে বয়ান হাজির করেছেন এভাবে, “তিন বাহিনী মিলে প্রতিটা চান্দাবাজ, টেম্পবুাজকে উত্তম আপ্যায়ন করে দেব”। ৫ আগস্টের পর বিএনপির তৃণমূলে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে আসতে থাকায় বর্তমানে ‘চান্দাবাজ’ এবং ‘টেম্পুবাজ’ শব্দগুলো দলটির বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যবহৃত হয়।
Akhi's story নামক যেই ফেসবুক পেইজ থেকে এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে সেটির অন্যান্য ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পেইজটি থেকে একদিকে নিয়মিত প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষাভাবে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং অন্যদিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জামায়াতে ইসলামির পক্ষে বয়ান তৈরি ও প্রচার করা হয়।
পেইজটিতে একই এআই পুলিশ চরিত্র দিয়ে ‘জামাত সরকার গঠন করবে’ ’ইসলামি জোট থেকে প্রধানমন্ত্রী’ ‘বিএনপি ৪০ সিট, জামাত পাবে ১৯০’ ইত্যাদি শিরোনামে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
Akhi's story পেইজটির ফলোয়ার সংখ্যা ২ লাখ ৯২ হাজার। এবং এটির একেকটি ভিডিও কয়েক হাজার থেকে কয়েক মিলিয়ন পর্যন্ত ভিউ হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াত এবং তার নির্বাচনী জোটসঙ্গীদের বিরুদ্ধে এবং বিএনপির পক্ষে বয়ান তৈরি ও প্রচারে নিয়োজিত আছে এমন অনেক ফেসবুক পেইজও রয়েছে।
যেমন, “Next Insight Network - নেক্সট ইনসাইট নেটওয়ার্ক” নামক একটি পেইজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরা এক মধ্যবয়স্ক আলেম স্টেজে দাঁড়ি জনতার উদ্দেশ্যে বলছেন, “মওদুদীর ইসলাম মদিনার ইসলাম নয়। তোমরা এই মাটিতে অনেক ধোঁকাবাজি করছো, এইবার করতে আসলে তোমাদের ঠাঁই নাই। একাত্তরের মতো আবারও জামায়াতকে না করার সময় এসেছে। সবাই জামায়াতকে না বলুন।”
“মওদুদীর ইসলাম মদিনার ইসলাম নয়”-- জামায়াতে ইসলামী বিপক্ষে বহুল প্রচারিত একটি বয়ান, যা এখানে তুলে আনা হয়েছে এআই আলেম চরিত্রকে দিয়ে।
আবার জামায়াতের বিরুদ্ধে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দলটির ভূমিকার কারণে এই সংক্রান্ত বয়ান তাদের বিরুদ্ধে যায়। সেটিও এই ভিডিওতে উঠে এসেছে এভাবে, “একাত্তরের মতো আবারও জামায়াতকে না করার সময় এসেছে”।
একই পেইজে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জামায়াতকে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে বহু ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। যেমন কয়েকটি ভিডিওর শিরোনাম, “"৭১ বিরোধী, ইসলাম বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে ভোটে না বলুন”, “বরিশালে জামায়াত ও ইসলামি আন্দোলন ছেড়ে বিএনপিতে যোগাযোগ করলো ৩০০ নেতাকর্মী” ইত্যাদি।
এই পেইজে বিএনপির পক্ষে ভোট চেয়েও বহু ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এবং পেইজটির বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সব উপস্থাপকই এআই চরিত্র। তাদের কেউ আলেম, কেউ সংবাদ উপস্থাপক, কেউ বক্তা। পেইজটিতে হিজাবী এবং হিজাবী নন এমন দুইজন নারী এআই উপস্থাককে নিয়মিত দেখা যায়।
৫৮ হাজার ফলোয়ার যুক্ত Next Insight Network নামক পেইজের একেকটি ভিডিও কয়েক হাজার থেকে কয়েক মিলিয় পর্যন্ত ভিউ হয়েছে।
এআই চরিত্র দিয়ে রাজনৈতিক প্রচার: ১৮টি পেইজে যা যা মিললো
এধরণের এআই নির্মিত চরিত্র তৈরি করে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্য়মে ভিডিও তৈরি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এমন ১৮টি ফেসবুক পেইজ, ব্য়ক্তিগত প্রোফাইল এবং ইউটিউব চ্যানেল শনাক্ত করে সেগুলোতে কী প্রচার করা হয় তা বিশ্লেষণ করেছে দ্য় ডিসেন্ট।
এতে দেখা গেছে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব এআই চরিত্রের মাধ্যমে নানান ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব পেইজ থেকে হয়তো বিএনপির পক্ষে অথবা জামায়াতের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ বা অন্যান্যদের পক্ষেও প্রচারণা লক্ষ্য করা গেছে।
এসব পেইজে এআই চরিত্রগুলো নানান পেশায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কোনো পেইজে এআই চরিত্রটি পুলিশ কর্মকর্তা, আবার কোথাও সাংবাদিক, কোথাও টকশো উপস্থাপক, কোথাও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, কোন ক্ষেত্রে আলেম, কোন চরিত্র একজন হিজাবী নারী আবার কোথাও আধুনিক পোশাকি নারী।
নিচে এসব এআই চরিত্রগুলোর ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে পেইজগুলোর কন্টেন্টের ধরণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হরো।
সাংবাদিক ও সংবাদ উপস্থাপক
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে ভুয়া বা অযাইকৃত তথ্যকে খবরের আকারে উপস্থাপন করার জন্য সাংবাদিক ও সংবাদ উপস্থাপকের এআই চরিত্র ব্যবহার করা হচ্ছে কিছু পেইজে।
Akhi's story পেইজের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন নারী সাংবাদিক বুম হাতে একজন রিকশাওয়ালাকে প্রশ্ন করছেন, “চাচা, আপনি বিএনপি করেন না?” উত্তরে সেই রিকশাওয়ালা বলছেন, “নারে মা। আমি রিকশাওয়ালা, চাঁন্দাবাজ না। আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতেও চাঁন্দাবাজ নাই। ছোড মুখে একটা কথা কই, নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের একই বিষ। মনে রাখবা মা।”

Next Insight Network-এর একটি ভিডিওতে একজন সংবাদ উপস্থাপককে বলতে দেখা যাচ্ছে, “গণভোটের দাবি না মানলে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৩ তারিখের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিতে বাঁধা না দেয়ার ঘোষণা জামায়াতে ইসলামীর।”
এই দুটি পেইজের পাশাপাশি DVC News, Jamaat Shibir Supporters, সত্যের পথে থাকুন, Karim Box Exposed, Next Bangladesh Network, BNP Info Network , জাতিস্বর এবং মগবাজার - Moghbazar — এই পেইজগুলো নিয়মিত সাংবাদিক ও সংবাদ উপস্থাপক চরিত্র ব্যবহার করে এআই ভিডিও তৈরি করে।
ওয়াজ ও ধর্মীয় বক্তা
নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারণার জন্য ওয়াজের বক্তা ও ধর্মীয় চরিত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
Next Insight Network-এর একটি ভিডিওতে একজন ওয়াজের বক্তাকে বলতে দেখা যাচ্ছে, “জামায়াত ভ্রান্ত আকীদা এটা মওদুদী সাহেব নিজেই জানতো এজন্য তাদের সন্তানদের জামায়াত করতে দেয়নি; আল্লাহ বানাইছেন ইসলাম আর শয়তান বানাইছে জামায়াত।”
এছাড়াও Next Bangladesh Network, মগবাজার - Moghbazar, জাতিস্বর, Politics Paheli, সত্যের পথে থাকুন এবং Akhi's story পেইজগুলোও ওয়াজ ও ধর্মীয় বক্তার এআই চরিত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

পডকাস্ট হোস্ট বা গেস্ট, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
পডকাস্ট হোস্ট বা গেস্ট, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সাক্ষাতকার গ্রহীতা ইত্য়াদি চরিত্র ব্যবহার করেও তৈরি করা হচ্ছে এআই ভিডিও।
Jamaat Shibir Supporters পেইজের একটি এআই পডকাস্টে এক নারীকে বলতে দেখা যাচ্ছে, “জামায়াতের ভোট ৪-৫ পার্সেন্ট বলে হেয় করা হয়েছিলো, তারাই জরিপে ৩২ থেকে ৩৫ পার্সেন্ট। আগামী নির্বাচনে জামায়াত সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।”
এছাড়াও Next Insight Network, Next Bangladesh Network, মগবাজার, মিম নেতা, Romana Rahman — এসব পেইজে পডকাস্ট হোস্ট বা গেস্ট, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ইন্টারভিউয়ার ইত্য়াদি চরিত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা
কিছু কিছু পেইজে আর্মি অফিসার ও পুলিশ অফিসারের এআই চরিত্র ব্যবহার করেও ভিডিও তৈরি করতে দেখা গেছে। ‘সত্যের পথে থাকুন’ পেইজে একটি ভিডিওতে একজন এআই নির্মিত সেনা অফিসারকে একটি জনসমাবেশে বলতে দেখা যাচ্ছে, “ইউনূস সেনাবাহিনীকে গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু সে হয়তো জানেনা, সেনাবাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক, চব্বিশের রাজাকার নয়।”

এছাড়াও Akhi's story, Karim Box Exposed — এই পেইজগুলো তাদের ভিডিওতে আর্মি অফিসার ও পুলিশ অফিসারের চরিত্র ব্যবহার করে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
সাধারণ নাগরিক, ছাত্র ও বিশ্লেষক
কিছু পেইজকে সাধারণ জনগন ও শিক্ষার্থীদের এআই চরিত্র ব্য়বহার করতে দেখা যায়। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে তৈরি ভিডিওগুলোতে এধরণের চরিত্র ব্য়বহার করতে দেখা গেছে। Jamaat Shibir Supporters পেইজের একটি এআই নির্মিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল সাধারণ মানুষ বলছেন, “কুমিল্লা-১১ আসনে ভোট কাকে দিবো? আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিবো ইনশাআল্লাহ।” এই ভিডিওটি প্রায় ৩ লাখ ৩ হাজার মানুষ দেখেছে। লাইক করেছেন প্রায় ১৮ হাজার ১০০ জন এবং শেয়ার করেছেন ৪ হাজার ৮০০ জন।
এধরণের চরিত্র আরো ব্য়বহার করতে দেখা গেছে Politics Paheli, Karim Box Exposed পেইজকে। এছাড়াও, Jahid Hasan Jewel পেইজটিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের এআই চরিত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
রাজনীতিবিদ, আইনজীবী
কিছু কিছু পেইজের ভিডিওতে এআই জেনারেটেড রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্টের সদস্য এবং আইনজীবী চরিত্র ব্য়বহার করতে দেখা গেছে।
News Bangla g24 ইউটিউব চ্য়ানেলটির একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের পার্লামেন্টের একজন এমপি বলছেন, “আওয়ামীলীগকে বাদ দিয়ে তারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করবে। এটা কি মগের মুল্লুক? অপেক্ষা কর এবার যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবার তোদের কপালে পড়বে।”

এছাড়াও Karim Box Exposed, Akhi’s story, সত্য়ের পথে থাকুন-এর ভিডিওতে এআই নির্মিত রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্টের সদস্য এবং আইনজীবী চরিত্র ব্য়বহার করতে দেখা গেছে।
বাস্তব চরিত্রকে নকল করে তৈরি চরিত্র
কিছু পেইজকে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি ও কণ্ঠস্বর ব্য়বহার করে ভুয়া বক্তব্য় সংবলিত ভিডিও তৈরি করতে দেখা গেছে।
জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের ছবি নিয়ে বানানো Next Insight Network-এর এরকম একটি ডিপফেইক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি বলছেন, “আমরা চাইলাম নির্বাচনের আগে গণভোট কিন্তু ইউনূস আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো মুলা।”
এছাড়াও মগবাজার, Politics Paheli, Romana Rahman, Voice of Ekattor এসব পেইজ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি ব্য়বহার করে ভুয়া বক্তব্য সংবলিত এআই ভিডিও তৈরি করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনকে টার্গেট করে ভিডিও
এধরনের পেইজগুলোর একটি বড় অংশ আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিভিন্ন এআই নির্মিত চরিত্র দিয়ে নিজেদের দলের পক্ষে এবং বিরোধী দলের বিপক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে এসব পেইজকে।
উদাহরণস্বরূপ, Jamaat Shibir Supporters- এর একটি এআই তৈরি জনসভার ভিডিওতে একজন বক্তাকে বলতে দেখা যাচ্ছে, “সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ এবং স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দিন।” পেইজটির আরেকটি ভিডিওতে একজন সাংবাদিক একজন নারী গার্মেন্টসকর্মীকে প্রশ্ন করছেন তিনি কাকে ভোট দিবেন। উত্তরে গার্মেন্টসকর্মী বলছেন, “আমরা যারা গার্মেন্টসে চাকরি করি, আমরা অনেকেই একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নিছি এবার জামায়াতকে ভোট দিবো।”
অন্যদিকে, Next Bangladesh Network-এর একটি ভিডিওতে একজন ওয়াজের বক্তা বলছেন, “ভোটের লোভে জামায়াত নেতারা যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে।” Next Insight Network - নেক্সট ইনসাইট নেটওয়ার্ক পেইজের আরেকটি ভিডিওতে দুইজন ব্য়ক্তিকে বলতে দেখা যাচ্ছে, “জামায়াত একটি প্রতারক দল যা মানুষের ইমান নষ্ট করে। তারা বলে, যদি জামায়াতে ভোট দাও তাহলে নামাজ না পড়লেও জান্নাতে যাবে। নাউজুবিল্লাহ।”
কী প্রভাব পড়তে পারে?
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এধরনের এআই ভিডিও ব্যাপক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর অধ্যাপক সুমন রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই ভিডিওগুলো ডেফিনিটলি নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে। যেহেতু এখন এআই দিয়ে ক্য়ারেক্টার তৈরি করা যাচ্ছে, যারা করছে তারা তো আর কোনো কপিরাইট মানছে না। যার চেহারা দরকার তার চেহারা বসিয়ে দিচ্ছে, যে ক্য়ারেক্টার দরকার সে ক্য়ারেক্টার বসিয়ে দিচ্ছে। এটা যদি সার্কুলেটেড হতে থাকে এবং সার্কুলেটেড না হওয়ার তো কোনো কারণ নাই যেহেতু এআই দিয়ে ভিডিও বানানো নিষিদ্ধ কিছু না। এখন যেটা হবে, এটাকে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এটা নিয়ে যদি সোশ্য়াল মিডিয়া রেগুলেশন সেভাবে না থাকে তাহলে ডেফিনিটলি এটার একটা বিরাট প্রভাব পড়বে।”
তিনি আরো বলেন, “এআই তো অনেক রিফাইন্ড জিনিস। নরমাল একদম র ফটো দিয়ে ফটোশপ করা জিনিসও মানুষ বিশ্বাস করে, কারণ তার কনফার্মেশন বায়াস আছে। যেহেতু তার কনফার্মেশন বায়াস আছে, সে বিশ্বাস করতেই বসে আছে। এআই জিনিসটাকে আরো রিফাইন্ড করে হাজির করে। ফলে জিনিসটাকে মানুষ আরো দ্রুত এবং সহজে বিশ্বাস করবে।”