চট্টগ্রামে সাবেক ছাত্রদল নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে ২০-২১ রাউন্ড গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। রোববার রাত ১০টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও এলাকায় ফরিদ মেম্বারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক ওই ছাত্রদল নেতা চাঁদা চাওয়ার প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে গুলি করার বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে এখনও গুলিবর্ষণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ভুক্তভোগী হলেন আহমেদ রেজা বাবু। তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি। তার প্রয়াত বাবা ফরিদ উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক।
এদিকে গুলি করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এ ধরনের ঘটনা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও ফরিদ মেম্বারের বাড়ি এলাকায় একটি খালি জায়গায় সীমানা দেয়াল নির্মাণ করছেন এক ব্যক্তি। কাজটি মো. জনি নামে এক ঠিকাদারকে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ১০-১১ জন যুবক বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজ্জাদ আলী খানের নামে ঠিকাদার জনির কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই সময় জনি তার পূর্বপরিচিত আহমেদ রেজা বাবুকে জানান। বাবু ঘটনাস্থলে এসে তারা কিসের টাকা চাচ্ছে জানতে চান। ওই যুবকরা ‘চা-নাস্তার’ টাকা চান বলে জানায়। তখন বাবু তাদের দুই হাজার টাকা দিতে বলেন। ঠিকাদার তাদের ৩ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তারা টাকা না নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে বিদেশি দুইটি নাম্বার থেকে কয়েক দফা হুমকি পান বাবু। গত রোববার রাত ১০টার দিকে চার যুবক বাবুর বাড়ি লক্ষ্য করে ২০-২১ রাউন্ড গুলি চালায়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নারী-শিশুরা চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। পরে পুলিশ গিয়ে আলামত উদ্ধার করে।
জানতে চাইলে আহমেদ রেজা বাবু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ও তার পরিবার আতঙ্কিত বলে জানান এলাকার লোকজন।
এ প্রসঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দিতে আসেননি। অভিযোগ পেলে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এদিকে গুলির ঘটনার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ ও সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান। নেতারা বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এলাকায় অবস্থান নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তারা নিয়মিতভাবে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষকে ভীতিসহ প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, ‘গুরুতর নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতিতে যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তা জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে।’
তারা আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা কেবল ব্যক্তি বা দলকে লক্ষ্য করছে না, এটি পুরো সমাজকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। জনগণ তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। এই ধরনের ঘটনা নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তৎপর হতে হবে।’
এর আগে গত ৫ নভেম্বর বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি করে ‘সন্ত্রাসী’ সারোয়ার বাবলাকে হত্যা করা হয়। গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহসহ চারজন। এই ঘটনায়ও বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজ্জাদ বাহিনীর দিকে অভিযোগের তীর।