বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দুটি শক্তি স্পষ্টভাবে উপস্থিত। একটি শক্তি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, অন্যটি হলো পশ্চাৎপদ শক্তি।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা দল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাফল্য অর্জন করে তারাই, যারা সত্যের পথে থাকে, সঠিক পথে থাকে, লড়াই করে, সংগ্রাম করে। তারাই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আজ সেই দিনটি উপস্থিত- যে দিন কোনো চক্রান্তের কাছে, কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথানত না করে, অতীতে যেমন জনগণের ঐক্যের মাধ্যমে আমরা সব চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছি, আজ আবার তেমনভাবেই জনগণের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।
তিনি বলেন, একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, জনগণের স্বপ্নের বাংলাদেশ, শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার স্বপ্নের বাংলাদেশ, তারেক রহমানের ৩১ দফার বাংলাদেশ- সেই বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য আজকের দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ যে পোলারাইজেশন ( ধারণা বা তত্ত্ব) সামনে এসেছে, অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ কী বেছে নেবে- তারা কি স্বাধীনতাকে বেছে নেবে, সার্বভৌমত্বকে বেছে নেবে, গণতন্ত্রকে বেছে নেবে? নাকি সেই পশ্চাৎপদ শক্তিকে বেছে নেবে, যারা অতীতে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে দুটি শক্তি স্পষ্টভাবে উপস্থিত। একটি শক্তি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, উদার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি। যে শক্তি সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যে শক্তির নীতি হলো- আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত না হতে পারি, তোমার কথায় বিশ্বাস না-ও রাখতে পারি, কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমি অবশ্যই রক্ষা করবো। এটাই প্রকৃত গণতন্ত্র। আরেকটি শক্তি হলো সেই পশ্চাৎপদ শক্তি, যারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আমরা এটা ভুলতে পারি না।১৯৭১ সালেও ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ ১৯৪৭ সালে, যখন এ দেশের মুসলমানরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও নিজেদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার জন্য লড়াই করেছিল, তখনও এই শক্তি তার বিরোধিতা করেছিল। ১৯৭১ সালে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আজ তারা রূপ পাল্টে, চেহারা পাল্টে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তারাই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারে। কিন্তু যারা আমাদের জন্মকে অস্বীকার করেছে, আমাদের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছে- তাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বারবার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছে, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেছে। আমরা জানি, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের ক্ষমা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তারা আমাদের ভবিষ্যৎকে হত্যা করেছিল। আজ আবার যখন সেই প্রশ্ন সামনে আসে, তখন আমাদের অবশ্যই তা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এই কথাগুলো বলার অর্থ এই নয় যে ছাত্রদের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছি বলে আবার নতুন কোনো ফ্যাসিস্টকে আমাদের ওপর চেপে বসতে দেবো। আমরা এমন কোনো শক্তিকে কখনোই ক্ষমতায় আসতে দিতে পারি না, যারা আমাদের পেছনে নিয়ে যেতে চায়।
বিএনপির এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের আত্মা, বাংলাদেশের সোল- এই দেশে আদিকাল থেকে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে সহাবস্থান করে আসছে। এটাই বাংলাদেশ। বিশ্বাস করি, আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন; খালেদা জিয়া, যিনি গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন লড়াই করেছেন এবং তারেক রহমান, যিনি ৩১ দফা দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন-সেই বাংলাদেশ নির্মাণের পক্ষে মানুষ রায় দেবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা আমরা সবাই জানি। ৫ আগস্টের পর আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিএনপিকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা, লড়াই করা, প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে, একদিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে। অন্যদিকে, আমাদের জন্য আশার আলো, যিনি আমাদের সামনে পথ দেখাচ্ছেন, সেই নেতা (তারেক রহমান) আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ২৫ তারিখে। আসুন, আমরা ২৫ তারিখে তাকে এমন এক সংবর্ধনা জানাই, যা বাংলাদেশে অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এবং বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন।