ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সে লক্ষ্যে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিটি শরিক দল ও জোটের সঙ্গে আলাদাভাবে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করবে দলটি।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষের দুয়েক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে আসন বণ্টনের ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি।
এদিকে, আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণফোরামের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির এ বৈঠক হয়।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আসন্ন নির্বাচন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক, আসন সমঝোতা ও নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত ৩৮টির বেশি দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে যোগ দেওয়া দলগুলো জানায়, বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য অটুট রাখা। বিএনপি ও শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র, বিভ্রান্তি ও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, যা ঐক্য বিনষ্টের ঝুঁকি তৈরি করছে। এতে রাজনৈতিক মেরূকরণ বাড়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
দলগুলো জানায়, বৈঠকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি। দলটির হাইকমান্ড এ বিষয়ে অতিরিক্ত সময় নিতে চায় না। তার আগে যুগপৎ আন্দোলনের প্রতিটি দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে কোন দলকে কয়টি আসন দেওয়া হবে কিংবা জাতীয় সরকার গঠিত হলে তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সে বিষয়গুলো জানানো হবে। আগামী ১৯ বা ২০ ডিসেম্বর জোট শরিকদের জন্য চূড়ান্ত আসন ঘোষণা করা হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কয়েকটি শরিক দল ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা জানতে চেয়েছে—যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে বিএনপি সরে আসছে কি না। ভবিষ্যতে শরিকদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সরকারে’ তাদের ভূমিকা কী হবে—এসব প্রশ্ন তোলা হয়।
সূত্র আরো জানায়, গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না তারা। সবাই সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত রেখে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার দাবি তোলেন। একই সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানান তারা। এছাড়া কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নিজস্ব প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামলে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা দিচ্ছেন বা হামলা করছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এর জবাবে বৈঠকে বিএনপি জানায়, মিত্র দলগুলোর সঙ্গে কোনো বৈরিতা রাখতে চায় না দলটি। যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে কারণে ঘোষিত কয়েকটি আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। পাশাপাশি যেসব শরিককে সরাসরি আসন দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না, তাদের সংসদের উচ্চকক্ষে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও রয়েছে
বৈঠকের পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, শরিকদের সঙ্গে খোলামেলা পরিবেশে আলোচনা করেছে বিএনপি। আসন বণ্টন নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করার বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই সবকিছু চূড়ান্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানান, আলোচনায় সব দলই তাদের মূল্যায়নের কথা বলেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দুয়েকদিনের মধ্যে পৃথক বৈঠকের কথা বলা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, আমরা কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট করিনি। তবে কমিটমেন্ট ছিল—যারা যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে, সরকারে গেলেও তাদের নিয়ে চলব।
তিনি আরো বলেন, এখন অনেকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু ধানের শীষ ছাড়া নির্বাচন করা কঠিন হবে। তারপরও আমরা শরিকদের কিছু আসন ছাড় দেব। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তা ঘোষণা করা হবে।