Image description

১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিকে ‘অবিস্মরণীয়’ করে রাখতে চায় দলটি।

এ জন্য তারেক রহমানের ফেরার দিন রাজধানী ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ সার্বিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার রাতে এই সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার পর দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসবেন। বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে গুলশান-বনানী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় জনসমাগম ঘটবে।

এই প্রস্তুতির ইঙ্গিত সম্প্রতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব নিজেও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সারা বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে।’ বিএনপি সেদিন দেশের রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে চায় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও ঢাকা-১৬ আসনে দলীয় প্রার্থী আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কর্মসূচি নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। শিগগির তা চূড়ান্ত হবে।

২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ছুটির দিনেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।

তারেক রহমানের আগমন ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত ‘চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) ’ পুনর্গঠন করা হয়েছে। সিএসএফের সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে সিএসএফের দায়িত্ব নিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ কে এম শামসুল ইসলাম।

ঢাকায় ফেরার পর তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তায় সিএসএফ কাজ করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাঁর জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) মোতায়েন করেছে।

তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যেই আছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ৫ ডিসেম্বর দেশে আসেন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ তাঁর শাশুড়ি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। মা খালেদা জিয়া গত মাসের শেষ দিকে গুরুতর অসুস্থ হয় পড়লে তারেক রহমানের দেশে ফেরা কবে, সে আলোচনা আরও জোরদার হয়। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর দেশে ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে দলের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও আবেগঘন ঘটনা হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে। এর প্রভাব নির্বাচনী মাঠে পড়তে পারে। এ কারণেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকায় বৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী ঢেউ তুলতে চায় দলটি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব ও ঢাকা-৪ আসনে দলের প্রার্থী তানভীর আহমেদ (রবিন) প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি বড় আবেগের বিষয়। আমরা মনে করি, সেদিন সারা দেশ থেকেই মানুষ ঢাকায় আসবে। একটি ঐতিহাসিক দিন সৃষ্টি হবে।’

তারেক রহমানের দেশে ফেরার আনুষ্ঠানিক তারিখ ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অনেকেই ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার প্রস্তুতির কথা জানাচ্ছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারেক রহমানের আগমনের প্রভাব সর্বস্তরে পড়বে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে, বিভ্রান্তি দূর হবে। তারেক রহমানের প্রতি আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।’