তফসিল ঘোষণার পর টার্গেট কিলিং ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। সেই কথা রেখেছে তারা। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ইনকিলাব মঞ্চ নেতা শরিফ ওসমান হাদির সাথে তার নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন। দুজনে মোবাইল ফোন নম্বর বিনিময় করেন। মাসুদের অন্তত ভিন্নরকমের ৫০টি ছবি বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে একাধিক সূত্র।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর টার্গেট কিলিং ও অগ্নিসন্ত্রাসের ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ। সেই কথা রেখেছে তারা। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ইনকিলাব মঞ্চ নেতা শরিফ ওসমান হাদির সাথে তার নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন। দুজনে মোবাইল ফোন নম্বর বিনিময় করেন। মাসুদের অন্তত ভিন্নরকমের ৫০টি ছবি বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে একাধিক সূত্র।
আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত একজন ফয়সাল করিম মাসুদ (ছদ্মনাম দাউদ বিন ফয়সাল) সাবেক ছাত্রলীগ সহসভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং আদাবর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বিশ্বস্ত অনুসারী। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাসুদের সাথে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। দু’টি ফেস ডিটেকশন অ্যাপে ফয়সাল করিমের একাধিক ছবি তুলনামূলক যাচাই করেও মিল পাওয়া গেছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসীর একাধিক ছবি ও হাদির সাথে থাকা সন্দেহভাজনদের ছবির ফরেনসিক টেস্ট করে ফয়সাল করিম মাসুদের ছবির মিল পেয়েছে দ্য ডিসেন্ট অনলাইন পোর্টাল। হাদিকে গুলিকারীর বাম হাতে থাকা বিশেষ ডিজাইনের ঘড়িটির সাথে ফয়সাল করিম মাসুদের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে থাকা একাধিক ছবির মিল পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো: সাজ্জাত আলী হামলাকারীকে শনাক্তের কথা উল্লেøখ করে বলেছেন, যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
গত বছর নভেম্বর মাসে মোহাম্মদপুরে একটি অফিসে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে সে জামিনে ছাড়া পায়।
এ দিকে সিআইডির তথ্য মতে হাদিকে গুলি করতে ব্যবহার করা হয়েছে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ ক্যালিভারের গুলি। এ ধরনের পিস্তল ভারতের অপরাধ জগতে বহুল প্রচলিত ও ব্যাপক ব্যবহৃত। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গত কয়েক মাসে শীর্ষ সুব্রত বাইনের মতো অন্তত ৮০ জন আততায়ীকে দেশের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করিয়েছে বলে দাবি করেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি।
পোস্টে জুলকারনাইন লেখেন, ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড, কুষ্টিয়া মেহেরপুর অঞ্চলের চরমপন্থী গ্রুপ এক হয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতা, এলাকার জনপ্রিয় নেতাদের টার্গেট করে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যিনি সুব্রত বাইনের হ্যান্ডলার ছিলেন, জামিনে থাকা পিচ্চি হেলাল ও চরমপন্থী গ্রুপ গণমুক্তি ফৌজের প্রধান মুকুল সম্প্রতি টেলিফোনে কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে।
তিনি আরো বলেন, সুব্রত বাইন কারাগার থেকে তার মেয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে কনফারেন্স করে পিচ্চি হেলাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পলাতক মুকুলের সাথে কথা বলেছে। পরবর্তীতে সুব্রত বাইনের মেয়ে সিনথিয়া বিতু নেপালে পলাতক বিডিআর মামলার আসামি লেদার লিটন, পিচ্চি হেলাল, মুকুল, বাড্ডার বড় সাঈদ ও দিপুর সাথে কথা বলিয়ে দেয়।
নির্বাচন বানচাল এবং দেশকে চরম অস্থিতিশীল করতে বিশেষ গোষ্ঠী সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে। একতাবদ্ধ থেকে এদের মোকাবেলা করাই একমাত্র উপায়।
কেউ কথা রাখেনি : নির্বাচনের আগে রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যে কাক্সিক্ষত ঐক্য সম্ভব হয়নি বরং তারা পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার সিঁড়িতে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই পা দিয়ে রেখেছেন, একধরনের অহংবোধ কাজ করছে। এই অহংবোধ তাদের নিয়ে গেছে পরস্পরের মধ্যে অতীতচারী রাজনৈতিক দোষারোপে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন পলাতক আওয়ামী নেতারা ও বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ও অনৈক্যের আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া এসব রাজনৈতিক নেতা ও নির্বাচনী প্রার্থীরা এখন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হতে শুরু করেছেন। এর আগে গণ অধিকার পরিষদ নেতা নুরুর ওপর হামলাকারীরা এখনো গ্রেফতার হয়নি। এবি পার্টির নির্বাচনী প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে বাবুগঞ্জে যখন সন্ত্রাসীরা হামলার চেষ্টা করেছে পুলিশ অদূরে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো অ্যাকশনে যায়নি। পরের দিন সেসব সন্ত্রাসী স্থানীয় টিএনওর সাথে হাসিমুখে ছবি তুলেছেন।
হাদিকেই কেন বেছে নিলো সন্ত্রাসীরা : শরিফ ওসমান হাদি কোনো এলিট শ্রেণী বা ক্ষমতাসীন পারিবারিক ঘরানা থেকে আসেননি। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের এমন নেতা খুব একটা পয়দা হয়নি। আধিপত্যবাদ বা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে এ ধরনের নেতাদের পোষ মানিয়ে অনুগত করে ক্ষমতার স্বাদ দিয়ে দুর্নীতিবাজ করে তোলা খুবই কঠিন কাজ। বিলাসবহুল গাড়ি, কালো টাকা ছাড়াই এ ধরনের নেতাদের সাথে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকলে অসংখ্য হাদি রাজনীতিতে চলে আসবে। গণবিপ্লবকে অসম্পূর্ণ রাখা সম্ভব হতো না।
রাজনৈতিক কিবলা পরিবর্তন : আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই জিয়াউর রহমান দেখিয়ে গেছেন, বেগম খালেদা জিয়া সেই লড়াই থেকে বিচ্যুত হননি। তাদের দল এখন কি করছে তা জনগণের কাছে বিশাল বিস্ময় ও অজস্র প্রশ্নের অবতারণা করছে। তারা রাজনৈতিক স্মৃতি হাতড়িয়ে দেখতে পান বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন ক্ষমতায় গেলে তিনি বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবেন। এখন সেই সংবিধানের ১০৬য়ের ইনভেলাপের মধ্যে বিএনপিকে কারা বন্দী করেছে জনগণ স্পষ্ট বুঝতে পারছে। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বুঝতে না পারলে, ধারণ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ কি হবে তা নির্ধারণ করছেন আজকের বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গুম, খুন, আয়নাঘর, জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধংস করার রাজনীতির অংশীদার হতে চাইলে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে তা মেনে নেবে না। কারণ তারা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং প্রতিবাদ করতে শিখেছে এবং নির্বাচনী প্রার্থীদের অবস্থান বুঝেই ভোট দেয়ার স্থির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
ফের নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের অপচেষ্টা : হাদিকে হামলার মধ্যে দিয়ে জনমনে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার ও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের চেষ্টা শুরু হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বাসে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। আধিপত্যবাদীবাদের অনুগত রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের সংস্কার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যেনো নিশ্চিত না হয় সে কারণে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে আওয়ামী লীগ তার কথা রেখেছে। জনগণের কাছে তার ওয়াদা অনুশোচনাহীন, বরং খুন হত্যার মধ্যে দিয়ে ভয়ঙ্কর এক অধ্যায়ে রাজনীতিকে আবার নিয়ে যাওয়া। এ জন্য দলটির সফট পাওয়ার হিসেবে পরিচিত একধরনের মিডিয়াকর্মী, অভিনেত্রী, সুশীল সমাজের অংশ মিডিয়ায় জানান দিচ্ছেন যে আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে আওয়ামী লীগই। তারা এত দিন ইনক্লুসিভ নির্বাচনের ভারতীয় দাওয়াই খেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলতেন। এখন তারা জামায়াত ক্ষমতায় গেলে বিজয় দিবস পালন হবে না, শরিয়া আইনে কি চোরের হাত কাটা হবে, হিন্দু ও চাকমা প্রার্থী দিয়ে জামায়তের অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে রাতের ঘুমকে হারাম করে ফেলেছেন।
হাদির শিশু সন্তানটি : ‘আজ যে শিশু, পৃথিবীর আলোয় এসেছে, আমরা তার তরে একটি সাজান বাগান চাই’ এই মায়াবী সঙ্গীত দির্ঘ দিনের। বাস্তবে আমরা আমাদের নিজেদের সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত কিংবা আধিপত্যবাদের কাছে ক্ষমতালিপ্সু নতজানু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবসান ঘটাতে পারিনি, কেবল পথ চলা শুরু করেছি মাত্র। হাদি বলেছেন, ‘মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে হয় না আসমানে হয়, আমি চলে গেলে আমার সন্তান লড়বে। তার সন্তান লড়বে। যুগ হতে যুগান্তরে আজাদির সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা সমুন্নত রাখবেই। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো শাহাদতের জন্যেই মায়ের উদর হতে পৃথিবীতে পা রেখেছি।’ হাদির শিশু সন্তানটি হয়ত তার বাবার এই কথার অর্থ বুঝতে আরেকটু সময় নেবে। কিন্তু সে কোনো অভিভাবকের আঙুল ধরে আগামীদিনের রাজপথে ঠিকই এক দিন হাজির হবে।
ক্ষমতার মালিক কে : জনগণই সব ক্ষমতার উৎস এই বহুল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির চর্চার কথা শুনিয়ে বাংলাদেশে দশকের পর দশক যে রাজনৈতিক চর্চা হয়ে এসেছে সেখানে জনগণ কখনো ক্ষমতার মালিক হতে পারেননি। ক্ষমতার মালিক একজনই। দেড়দশকের বেশি সময় স্বৈরাচারী হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল লড়াই করে যখন নাস্তানাবুদ হয়ে কোনো দিশা পায়নি তখন হেলিকপ্টার থেকে গুলি, জনতার বুক বরাবর ১৮০ ডিগ্রি তাক করে ধরা রাইফেলের গুলির পরোয়া না করে নিরস্ত্র জনতা জুলাই বিপ্লবে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন মানচিত্রে এঁকেছে। সেই সব অগ্নিঝড়া দিনগুলোতে রাজপথে একেবারেই খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে শ্রমজীবী, রিকশাওয়ালা, দোকানদার, সবজি বিক্রেতা, আদরের সন্তানকে নিয়ে যেসব নারী হাজির হয়ে বুক পেতে দিতেন গুলির মুখে তাদের অন্তরে ভয় দূর করে দিয়েছিলেন ক্ষমতার প্রকৃত মালিক। তারা যে উচ্চারণ করতেন, ‘বুকের মধ্যে অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ সেই ঝড় আজো থামেনি। নির্বাচনী ডামাডোলে কিছুটা সুপ্ত হয়ে আছে মাত্র।