Image description
 

সদা বিতর্কিত সব মন্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে আলোচনায় রাখতে তার জুড়ি মেলা ভার। যার মন্তব্য নিয়ে কখনো তৈরি হয়েছে চরম সমালোচনা, বয়ে গেছে নিন্দার ঝড়। আবার কখনো তার মন্তব্য যোগান দিয়েছে হাস্যরসের। বিএনপি থেকে রেকর্ড গড়ে ৫ বার বহিষ্কৃত বহুল আলোচিত রাজনীতিক সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান এখন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন।

 

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে যোগ দেন। আখতারুজ্জামান জামায়াতে যোগদানের খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা ধরনের আলোচনা।

 

অনেকেই প্রশ্ন করছেন— আখতারুজ্জামানকে দলে ভিড়িয়ে জামায়াত কী রাজনীতিতে একটি চমক দেখালো, নাকি দলটি তার রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার প্রমাণ রাখলো? আখতারুজ্জামানর মতো একজন চরম বিতর্কিত রাজনীতিককে জামায়াত কেন দলে নিলো, সেই প্রশ্ন এখন ‘টক অব দ্যা টাউন’। জামায়াতে যোগদানের কারণ সম্পর্কে আখতারুজ্জামান যা বলেছেন, তাতেও এক ধরনের হাসির খোরাক রয়েছে।

তিনি বলেছেন, জামায়াত লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে— তারেক রহমানের এমন মন্তব্যের কারণে আমি জামায়াতে যোগ দিয়েছি। কারণ, যারা এত লোক মারতে পারে, তারা তো শক্তিশালী। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নীতি-আদর্শের কারণে দলে যোগ দিয়েছেন আখতারুজ্জামান।

কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার নির্বাচিত সাবেক এই সংসদ সদস্য বারবার আলোচনায় এসেছেন তার বিতর্কিত সব মন্তব্যের কারণে। কখনো দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, কখনো বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আবার কখনো দলীয় সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। বারবার বহিষ্কৃত হয়ে অজানা কোনো এক শক্তিবলে তিনি আবার দলে ফিরে এসেছেন। ৫ বার বহিষ্কৃত হয়ে চারবারই দলে ফিরে আসার রেকর্ড বাংলাদেশে আর কোনো রাজনীতিকের নেই। তিনি কখন কী মন্তব্য করেন, তা বোঝার ক্ষমতা সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও নেই। ২০২৩ সালের ৮ জুন হঠাৎ করে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। তিনি ১৫০ মেগাওয়ার্ডের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন পেতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ওই সাক্ষাৎ করেন বলে নিজেই জানিয়েছিলেন তখন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী (হাসিনা) আমাকে ৭০ মেগাওয়ার্ডের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া এমন উদারতা আর কে দেখাতে পারে!

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উতখাৎ হওয়ার পরও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন আলোচিত রাজনীতিক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা আবারও দেশে ফিরে আসবেন— এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, মবের মাধ্যমে ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সবশেষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এক নিষ্ঠুর মন্তব্য করেছেন তিনি। একটি টক-শোতে তিনি বলেন, মিডিয়াগুলো কি নিউজ করছে! খালেদা জিয়া তো বেঁচে নেই, তিনি তো মারা গেছেন।

জামায়াতে যোগদানের পর আখতারুজ্জামানকে নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা যে অব্যাহত থাকবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ, সকালে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করে দলটিতে যোগ দেন আখতারুজ্জামান। পরে নিজেই গণমাধ্যমের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি। জামায়াতে যোগ দেওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি জামায়াতে যোগ দিয়েছি কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিব না। তারেক রহমান বলেছেন, জামায়াত লাখ লাখ লোক মেরেছে তার এই বক্তব্যের জন্য আমি জামায়াতে যোগ দিয়েছি। যারা এত লোক মারতে পারে তারাই তো শক্তিশালী; তাদের পাশে থাকা দরকার।

এদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে আখতারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর নীতি ও আদর্শ, দেশপ্রেম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সংগঠনের অবিচল অবস্থানের প্রতি গভীর আস্থা ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি ইসলাম ও ইসলামি মূল্যবোধ, দেশের স্বার্থ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবশিষ্ট জীবন অতিবাহিত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর নিয়ম-নীতি, আদর্শ, দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেন। জামায়াতের আমির তাকে আন্তরিকভাবে আলিঙ্গন করেন এবং তার দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করেন।

সাবেক এ সেনাকর্মকর্তার যোগদান অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ, দলীয় শৃঙ্খলা–পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান পঞ্চমবারের মতো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। নানা সময় সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে টক শো কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে আলোচনায় ছিলেন তিনি।