Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ না থাকায় যশোরের ছয়টি আসনেই ভোটের লড়াই হবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর। মাঠ পর্যায়ের তথ্য এবং পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ থেকে এই ধারণা পাওয়া গেছে। মাঠের তথ্যানুযায়ী, প্রধান এ দুই দলই ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে সক্রিয়। বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এখন খেলাধুলাসহ নানান প্রতিযোগিতা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প, কর্মীদের প্রশিক্ষণ, কেন্দ্রের জনপ্রিয় তারকা রাজনীতিকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করাসহ বিভিন্ন উপায়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

যশোর-১ (শার্শা) : এ আসনে এবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। আসনটিতে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলী কদর জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু পরেরবার ২০০৮ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জামায়াত নেতা মাওলানা আজীজুর রহমান। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এবার জামায়াত আজীজুর রহমানকেই তাদের দলের প্রার্থী করেছে। ২০০৮ সালের ভোটের হিসাব স্মরণ করে এবার এ আসনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে দলটি। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে জামায়াত নেতা আজীজুর রহমান যে ‘ক্লোজ কনটেস্টে’ গিয়েছিলেন, তা মূলত চারদলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির ভোটের জোরেই।

যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) : ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা সুলতানাকে এ আসনে প্রার্থী করেছে দলটি। খুলনা বিভাগের একমাত্র নারী প্রার্থী তিনি। তাঁর স্বামী যশোর জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে গুম ও হত্যার শিকার হন। ২০১৪ সালে দলের মনোনয়নে ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার সংসদ সদস্য নির্বাচনেও তিনি ভালো করবেন বলে সবাই আশা করছেন।

এ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতা মোহাদ্দিস আবু সাঈদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার জামায়াত প্রার্থী করেছে মোসলেহ উদ্দিন ফরিদকে। চিকিৎসক মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে কর্মজীবন কাটিয়েছেন। তার আগে ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ইতি ঘটিয়ে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

যশোর-৩ (বসুন্দিয়া ইউনিয়ন বাদে সদরের বাকি অংশ) : জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। কারণ এখান থেকেই পুরো জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ছয় আসনের মধ্যে এ আসনটি নিয়েই সবচেয়ে নির্ভার বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলামের নাম এখনো এখানকার মানুষের মনে জ্বলজ্বল করছে। দলের মনোনয়নও পেয়েছেন তাঁর সন্তান অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। জেলার মধ্যে একমাত্র এ আসনটিতেই দ্বিতীয় কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন না।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী করেছে আবদুল কাদেরকে। যশোর এম এম কলেজে ১৯৮০-৮১ বর্ষে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির থেকে ভিপি নির্বাচিত হওয়া আবদুল কাদের দীর্ঘদিন ঢাকায় গার্মেন্টস উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তিনি যশোরেই অবস্থান করছেন।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) : ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির মধ্যেও জেলার ছয় আসনের ভিতরে এ আসনটিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব মাত্র ৫ হাজার ৪৩৮ ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই টি এস আইয়ুবের ওপরই এবারও আস্থা রেখেছে দল। ধানের শীষ প্রতীককে এবার বিপুল ভোটে বিজয়ী করতে সমর্থ হবেন বলে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এ আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী করেছে জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলকে। তিনি বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

যশোর-৫ (মণিরামপুর) : আগের সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ আসন থেকে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস একবার স্বতন্ত্র হিসেবে, একবার জাতীয় পার্টি থেকে এবং আরেকবার চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফসার আহমদ সিদ্দিকীও একবার সংসদ সদস্য হন। তারা দুজনই প্রয়াত হয়েছেন। প্রথম দফার ঘোষণায় বিএনপি যখন এ আসনটি খালি রেখে দেয় তখন সবাই ধরেই নিয়েছিল যে, এ আসনে হয়তো তারা জোটসঙ্গী হিসেবে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের ছেলে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আবদুর রশিদকে প্রার্থী করতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার তালিকায় বিএনপি তাদের প্রার্থী হিসেবে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নাম ঘোষণা করায় সব জল্পনাকল্পনার অবসান হয়েছে।

এ আসনে শহীদ মোহাম্মদ ইকবালের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জেলা জামায়াতের শুরা কর্মপরিষদ সদস্য গাজী এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘মানুষের মাঝে খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

যশোর-৬  (কেশবপুর) : প্রার্থী সিলেকশনে এ আসনে বিএনপি বড় চমক দেয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের নাম ঘোষণা করে। বিএনপির এ সিদ্ধান্তকে স্থানীয়রাও ‘বুদ্ধিদীপ্ত’ বলেই মনে করছেন। সারা দেশে বিএনপির পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী শ্রাবণ বলেন, দীর্ঘদিন যশোর-৬ আসনটি বিএনপির হাতছাড়া ছিল। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চাই। তিনি বলেন, ‘দল আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছে, তার প্রতিদান জনগণের সেবার মাধ্যমে দিতে চাই।’

এ আসনে জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মোক্তার আলী এর আগে চারদলীয় জোট ও জামায়াতের হয়ে দুই দফায় প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব একটা কঠিন হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।