Image description

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় এসেছেন তার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। কথা ছিল শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার আগেই তিনি এভারকেয়ারে পৌঁছাবেন এবং দুপুর নাগাদ বেগম জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।

কিন্তু জুবাইদা রহমানকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বিজি ৩০২ ফ্লাইটটি শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

তবে তিনি বিমানবন্দরে থাকতেই বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়, দলীয় চেয়ারপারসনের জন্য কাতার সরকারের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির কারিগরি ত্রুটি থাকায় শুক্রবার ঢাকায় অবতরণ করতে পারছে না। তাই খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে। আর খালেদা জিয়াকে রবিবার (৭ ডিসেম্বর) নাগাদ লন্ডন নেওয়া হতে পারে।

এদিকে ডা. জুবাইদার আগমন ঘিরে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকেই এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে এভারকেয়ারে প্রবেশ করেন তিনি। খালেদা জিয়ার পাশে আড়াই ঘণ্টার মতো অবস্থান করে দুপুর আড়াইটায় ধানমন্ডিতে মায়ের বাসার উদ্দেশে হাসপাতাল ছাড়েন জুবাইদা। তবে তিনি আসলেন, হাসপাতালে অবস্থান করলেন, আবার বাসায় চলে গেলেন—এ নিয়ে তার বা দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

আসলে তিনি কী বার্তা নিয়ে এসেছেন? এ নিয়ে সবার মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। আর খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা বিলম্ব হওয়ার নেপথ্যে আসলে কী কারণ থাকতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, দলীয় চেয়ারপারসনকে লন্ডনে নিতে কাতার সরকার বিকল্প একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা নাগাদ সেটি ঢাকায় অবতরণ করতে পারে।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে দোয়া-মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই লন্ডনযাত্রার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

অপরদিকে দলীয় চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে শুক্রবার সারা দেশে দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছেন নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের দীর্ঘ অপেক্ষা, অবশেষে এলেন জুবাইদা

গত ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানোর পর থেকেই হাসপাতালের সামনে ভিড় করতে থাকেন নেতাকর্মীরা। শেষ কয়েক দিন দলীয় নেতাদের কড়াকড়ির কারণে কিছুটা চাপ কমতে থাকে। তবে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সিদ্ধান্ত হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে। তাকে বহনের জন্য কাতারের আমির দেবেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে হি‌থ্রো বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে ওঠেন ডা. জুবাইদা রহমান। এ খবর প্রচার হলে রাত থেকেই হাসপাতালের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে সারা রাতই সেখানে ছিলেন। নির্ঘুম রাত কেটেছে গণমাধ্যমকর্মীদেরও। অবশেষে বেলা পৌনে ১১টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জুবাইদা রহমান। আনুষঙ্গিক কাজ সেরে বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে এভারকেয়ারে প্রবেশ করে তাকে বহনকারী গাড়ি।

এ সময় রাস্তার দুই পাশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়। তাদের কয়েকজন জানান, দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবেই তারা এখানে এসেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডন নেওয়ার সিদ্ধান্তকে তারা যথাযথ বলে মনে করেন। এ জন্য ডা. জুবাইদার আগমনকে তারা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

হঠাৎ লন্ডনযাত্রা পেছানোর খবর ও দলীয় ব্যাখ্যা

ডা. জুবাইদা রহমান শাহজালাল বিমানবন্দরে থাকতেই বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়— কারিগরি ত্রুটির কারণে কাতার সরকারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ (শুক্রবার) আসছে না। শনিবার আসবে এবং খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে ফ্লাই করবে রবিবার (৭ ডিসেম্বর)। এরপর শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ-মাহফিলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, বেগম জিয়াকে লন্ডন নেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। তিনি ফ্লাই করার মতো অবস্থায় আছেন কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মেডিক্যাল বোর্ড।

আসছে বিকল্প এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে বিকল্প একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘‘কাতার রাজপরিবারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কারিগরি ত্রুটি থাকায় দেশটির আমির তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আরেকটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টায় এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।’’

তিনি আরও জানান, এখন যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসছে সেটিও কাতারের, তবে জার্মান কোম্পানির তৈরি। কাতার জার্মানি থেকে কোনও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না।

জুবাইদার আগমনে কী বার্তা পাওয়া গেলো

এভারকেয়ারে প্রবেশের পর আড়াই ঘণ্টা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশে অবস্থান করেন তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা। এ সময় তিনি সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডিতে মায়ের বাসার উদ্দেশে রওনা করে তার গাড়িবহর। এ সময় বাইরে অবস্থান করছিলেন বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যমকর্মী। ধারণা করা হচ্ছিল—ডা. জুবাইদা সরাসরি কথা না বললেও তার পক্ষ থেকে হয়তো দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ কিছু বলবেন। কিন্তু তা হয়নি। আসলে তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের বিষয়ে কী ধরনের বার্তা নিয়ে এসেছেন, তা খোলাসা হয়নি বলে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গণমাধ্যমকর্মী জানান, দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল এ বিষয়ে এক ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় শুক্রবারও সারা দেশে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।