Image description

আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি। ইতোমধ্যে সারাদেশের ৩শ’ নির্বাচনী আসনের মধ্যে ২৩৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলীয় ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে বিএনপি। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইশতেহারে বড় চমক আনছে দলটি। ক্ষমতায় এলে ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত বেকারদের জন্য এক বছরের ভাতা চালুর অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে দলটি। মূলত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা, জুলাই সনদ ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিশ্রুতির সমন্বিত ইশতেহার দেবে বিএনপি। তাছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নারী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ সাতটি বিষয়ভিত্তিক পোস্টার প্রকাশ করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, আগামী নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইশতেহারে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা, জুলাই সনদ সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। তাছাড়া ইশতেহারে দেশের তরুণ ভোটারদের বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তাদের কর্মসংস্থান, চাহিদা, নিরাপত্তা সবকিছু নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

ড. মোশারফ হোসেন আরও বলেন, বিএনপি অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসের মধ্যে ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এটা শুধু কথার কথা নয়। বিভিন্ন খাত ধরে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে তরুণরা। তাই বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে ইশতেহারের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক পোস্টার তৈরির দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও নেতাদের বৈঠক হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার পুস্তক আকারে ছাপা হবে। তবে মানুষ হয়ত সবাই ঠিকমত পড়বে না, এই ভাবনা থেকে ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো সারসংক্ষেপ আকারে আগেভাগে তুলে ধরা হবে। যেমন ফ্যামিলি কার্ড, হেলথ কার্ড, কৃষি কার্ড, কীভাবে কৃষকদের ডিজিটাল নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যায়, সেগুলো পোস্টার আকারে তুলে ধরবে বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় দেশের সকল জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে খাদ্য সহায়তার জন্য ফ্যামিলি কার্ড, বীজ, সার ও অন্যান্য সহায়তার জন্য কৃষক কার্ড এবং চিকিৎসা কার্ড চালুর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবে। নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সমান সুযোগ ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও বিএনপির প্রচারণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে জানা গেছে।নির্বাচনে কোন ধরণের বার্তা ও প্রচারণা পদ্ধতি সাধারণ জনগণকে আকৃষ্ট করবে তা বুঝতে, ভোটারদের আচরণ বিশ্লেষণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করেছে বিএনপি।

বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুব উল্লাহ শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলেছে। দেশের তরুণরা রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছেন। মতামত দিচ্ছেন। মোট ভোটারদের প্রায় ৪০ শতাংশই তরুণ। তাই বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু রাখা উচিত। তরুণদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জৈবিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি তাদের ইশতেহার তৈরি করবে বলে আশা করছি।

জানা গেছে, জনগণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ৭টি প্রধান বিষয় সামনে নিয়ে সরাসরি ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবে বিএনপি। এসব খাতগুলো হচ্ছে, জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারী ক্ষমতায়ন, ক্রীড়া ও ধর্মীয় বিষয়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) মডেল অনুসরণ করে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ার পরিকল্পনাও প্রচারণায় তুলে ধরবে দলটি।

জলবায়ু ও পানি নিরাপত্তা ইস্যুতে ২০ হাজার কিলোমিটার নদী-খাল পুনরুদ্ধার, খাল খনন, কমিউনিটি-ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা পুনরায় চালু এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি থাকবে। আর্থিক সংকটে থাকা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক ভাতা প্রদান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ নিরসনে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা খাতে বড় ধরনের সংস্কার আনবে, এটা দলের পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগেই জানিয়েছেন। স্কুলপর্যায়ের পাঠ্যক্রমে ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তাছাড়া একাধিক ভাষা শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার প্রকাশ করা হবে। বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা, জুলাই সনদ ও গ্রুপভিত্তিক প্রতিশ্রুতির সমন্বিত ইশতেহার নির্বাচনী প্রচারে আলাদা মাত্রা যোগ করবে।

শীর্ষনিউজ