Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগোচ্ছে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ততই নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গেও সেরে নিচ্ছে বোঝাপড়া। এবার বড় রাজনৈতিক দলগুলো সরাসরি কোনো নির্বাচনি জোট করার ঘোষণা না দিয়ে নতুন কৌশল নিয়েছে। এখন নির্বাচন খুবই কাছাকাছি চলে এসেছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষিত হচ্ছে। বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচনী জোট ঘোষণা না দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে শরীকদের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাচ্ছে। দলটি ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে বিএনপিকে কৌশলী হতে দেখা গেছে। দলটি জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৬২টি ফাঁকা রেখে বাকী ২৩৮ আসনে প্রার্থীদের প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। আসন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ফাঁকা রাখা ওই ৬২টির মধ্যে বেশিভাগই যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আসন। এছাড়াও গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়া বিপ্লবীদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা যেসব আসনে ভোট করার সম্ভাবনা রয়েছে এমন বেশ কিছু আসনও রয়েছে ওই ৬২ আসনের মধ্যে। এদিকে, নানা দাবি নিয়ে এখনো যদিও যুগপৎ কর্মসূচীতে মাঠে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্দোলনের মাঠের এই যুগপৎ সঙ্গীদের জোট সঙ্গী বলতে নারাজ দলগুলো। তারা বলছে, শুধু আসন সমঝোতা হবে তাদের মধ্যে, কিন্তু সেটি কোনো নির্বাচনী জোট নয়। এদিকে এই দুই দল এবং তাদের বলয়ের নেওয়া কৌশলের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে তারা শিগগিরই একটি নির্বাচনী জোট করতে যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, সম্ভাব্য এই জোটটি প্রাথমিকভাবে নির্বাচনী জোট হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করবে।

বিএনপির সঙ্গে যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুগপৎ কর্মসূচির সঙ্গে ছিলো, বিএনপি এবারের নির্বাচনে তাদের জন্য আসন ফাঁকা রেখেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছে- এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষনেতারা একাধিকবার বসেছেন, কাকে কতটি আসন দেওয়া যায় তা নিয়েও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে মিত্রদের। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিগত আন্দোলনে যারা রাজপথে সঙ্গী ছিলেন তাদের জন্য ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রয়েছে বিএনপির। তবে দলটি বিএনপিকে প্রাথমিকভাবে যে আসনের চাহিদা দিয়েছে তা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামী সাতটি দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই আট দল যুগপৎ কর্মসূচিতে রয়েছে। কয়েকদিন ধরে একটি ফটোকার্ড ভাসছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, যাতে বলা হয়েছে জামায়াতের কাছে ২০০ আসন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। অবশ্য ২৪ নভেম্বর বিবৃতিতে দিয়ে ওই ফটোকার্ড ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছে ইসলামী আন্দোলন। ওই বিবৃতিতে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীসহ যে আটটি দল একসঙ্গে রয়েছে তারা কিন্তু জোট নয়, তারা আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। যাতে এই আটটি দলের ভোট একবাক্স যায়। সেক্ষেত্রে ২০০ আসন চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শিগগিরই একটি নতুন রাজনৈতিক জোট আসছে বলে গতকালই জানিয়েছেন। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গত ২৪ নভেম্বর এ ঘোষণা দেয় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই বিএনপি-জামায়াতের বাইরে গিয়ে নতুন আরেকটি জোট দেখবে দেশের মানুষ। যারা কাজ করবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকঙ্খা বাস্তবায়নে। তিনি আরও বলেন, একটি নতুন অ্যালায়েন্স দেখতে পাবে দেশবাসী। যারা সংস্কারের পক্ষে, নারীদের পক্ষে, আলেম-ওলামাদের পক্ষে, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বাধীন নতুন এই সম্ভাব্য জোটে থাকছে- আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। এছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন বাদে গণতন্ত্র মঞ্চের আরেকটি দলও জোটের অংশ হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। পাশাপাশি গণঅধিকার পরিষদসহ বেশকিছু দলের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত মোটাদাগে পাঁচটি দল ও সংগঠন সম্ভাব্য এই জোটে শামিল হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

নির্বাচন আসলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা মেরুকরণ তৈরি হয়। নির্বাচনী তরী পার হতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেয় দলগুলো। ভোটের আগে জোট মহাজোটে অন্তর্ভূক্ত হয় কিছু দল। ভোটের অংক, নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থান ও দলের ভবিষ্যত নানা পদক্ষেপ মাথায় রেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যায় দলগুলো। ত্রয়োদশ নির্বাচনের আর বেশি বাকী নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ভোটের আগে এমন আরও নানা জোট, উপ-জোট বা আসন সমঝোতার মোর্চা দৃশ্যমান হতে পারে।

শীর্ষনিউজ