আগামী বছরের (২০২৬) ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের অনেক রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী মনোনীত করে ফেলেছে প্রায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক ভোট আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। পটপরিবর্তনের পর কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচনের সময় যখন খুব কাছে, ঠিক তখনই ঢাকার তিনটি ‘বিশেষ’ আসনে বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২৭৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এই বিশেষ উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানই পড়েছে ঢাকার ওই তিনটি সংসদীয় আসন এলাকায়।
ঢাকায় মোট ২০টি সংসদীয় আসন আছে। নির্বাচনের আগে সেখান থেকে কেন শুধুমাত্র তিনটি এলাকায় এই বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়- এ প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।
যে ২৭৪টি মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, শশ্মান ও কবরস্থানে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এবং বরাদ্দ বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি বাংলা।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের অবস্থানই সংসদীয় আসন ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ এবং ঢাকা-১১ এলাকায়। শুধুমাত্র তিনটি সংসদীয় আসন এলাকাতেই কেন এত বরাদ্দ দেওয়া হলো এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গণমাধ্যমটি দেখতে পেয়েছে, ২৭৪টির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ১৪৫টি মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরের অবস্থান ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ এবং নিউমার্কেট এলাকায়।
ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে মাত্র সপ্তাহ খানেক আগেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এই ঢাকা-১০ আসনের ভোটার হয়েছেন।প্রায় কাছাকাছি সময়ে ওই সংসদীয় আসনের মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরে তার মন্ত্রণালয় থেকেই কেন সিংহভাগ বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলো? জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেছেন, ‘ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাদের সুপারিশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা তিনি জানেন না।’
এদিকে ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরাদ্দের বাকি ১২৮টি প্রকল্প অন্য যে দুইটি আসনে দেওয়া হয়েছে সেই দুইটি হলো- ঢাকা-৯ এবং ঢাকা-১১ আসন।ঢাকার ওই দুইটি আসন থেকে আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা অংশ নিচ্ছেন।
তাহলে কি ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা ঢাকার যেসব আসনে নির্বাচন করবেন শুধুমাত্র সেসব এলাকার মসজিদ মাদ্রাসায় ভোটের আগে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সময় তো শেষ হয়ে যায়নি। সারা দেশের অন্য অনেক জায়গায়ও তো বরাদ্দ গেছে।’
আগামী ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, তফশিল ঘোষণার পর আর এই ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যায় না।
ভোটের আগে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের নৈতিক ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে জেলা পরিষদে এডিপি হিসেবে বিশেষ কিছু আসনের জন্য যে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু।’
এর আগে গত ৫ অক্টোবর ঢাকার ১৪টি ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ৪২ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যেগুলো ছিল ঢাকার ১০টি আলাদা আলাদা এলাকায়। যে কারণে সেটি নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্নও ওঠেনি। কিন্তু এখন সুনির্দিষ্ট এই তিনটি আসনেই বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠল।